গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের জ্বর ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু সংক্রমণ হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এ সময় ডেঙ্গুর জটিলতা, যেমন রক্তপাত, রক্ত ঘন হয়ে যাওয়া, শরীরে (পেট ও ফুসফুসে) পানি জমা হওয়া এবং গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ে। ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- হেপাটাইটিস এ, বি ও ই এই সময়ে বেশি দেখা যায়, তবে বিশেষত হেপাটাইটিস ই মারাত্মক হতে পারে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনা গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ঘটে, যা জটিল হলে মায়ের মৃত্যু ঘটাতে পারে। হেপাটাইটিস বি হলে গর্ভস্থ শিশুও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- রুবেলা রোগের ফলে গর্ভপাত ও জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদিও করোনার প্রকোপ কমেছে, গর্ভাবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলে মা ও শিশুর জন্য জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
- গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাস সংক্রমণ শিশুকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে এখনও জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
- ভেরিসিলা ভাইরাসের সংক্রমণে মায়ের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর ভাইরাল জ্বরে গর্ভের শিশুর কী ক্ষতি হতে পারে–
গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে মা ও শিশুর জন্য ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে, প্রথম তিন মাসে জ্বর হলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়; উদাহরণস্বরূপ, রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
কিছু ভাইরাল জ্বরের কারণে শিশুর জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে হাম, রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাস, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ভেরিসিলা, ও পারভো ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত। এসব ত্রুটির মধ্যে হার্টের ছিদ্র, ব্রেন ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, বধিরতা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, এবং অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ-
যদি তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে চলে যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি জ্বরের সাথে কাশি, গায়ে র্যাশ বা ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা বা শরীরের যন্ত্রণা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কখনও কখনও জ্বর স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়, তবুও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি।
ওষুধ –
গর্ভাবস্থায় প্যারাসিটামল একটি নিরাপদ ওষুধ, তবে এটি মাঝে মাঝে ক্যাফেইন, কোডেইন বা অন্যান্য উপাদানের সাথে মেশানো থাকে, তাই এই ধরনের ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা নিষেধ। অনেক ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
প্রতিরোধে করণীয়-
- প্রথমত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। হাত নিয়মিত সাবান দিয়ে ধোয়া উচিত এবং প্রতিদিন গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।
- অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ গর্ভাবস্থায় রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এ সময় জনসমাগম ও ভিড়ের স্থান থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় ভাইরাল জ্বরের ঝুঁকি কমাতে গর্ভধারণের আগে কিছু ভ্যাকসিন গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রুবেলা, হেপাটাইটিস ও করোনার। যদি আগে নেওয়া না থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
- প্রচুর পানি পান করা দরকার এবং ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। ফলের রস, গরম চা ও স্যুপ শরীরকে স্বস্তি দেয় এবং ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- বাইরে খাবার খাওয়ার চেয়ে বাসায় তৈরি খাবার খাওয়া ভালো।
- ভাইরাল জ্বর শরীরকে দুর্বল করে দেয়, তাই যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। HealthxBD
আরও জানুন-
–বাতের সমস্যার কারণ-লক্ষণ ও চিকিৎসা
–ঘামাচি বা হিট র্যাশ থেকে মুক্তির উপায়
–ত্রিশেই হাঁটুর ব্যথায় কাতর? জেনে নিন নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়!