স্ক্যাবিস (scabies) বা খোসপাঁচড়ার প্রাদুর্ভাব খবরের শিরোনাম হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে। “রাবির গণরুমে ভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা” এই শিরোনামে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মেডিকেল সেন্টারে গত এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন এ চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী শহরেও এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক মাশিউল আলম হোসেন।
মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ” এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজশাহীর সমস্যা নয়, এটা গোটা বাংলাদেশেরই সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টারে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী পাচ্ছি। আগে প্রাইভেট চেম্বারে দিনে দুইজন এ রোগের রোগী পাওয়া গেলেও এখন দিনে পাঁচ-ছয়জন পাওয়া যাচ্ছে।
‘স্ক্যাবিস’ (scabies) কী ও কীভাবে ছড়ায়?
এটি একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবীজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে চর্মরোগ। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই (Sarcoptes scabiei) নামক পরজীবীর সংক্রমণে স্ক্যাবিস হয়ে থাকে। আবালবৃদ্ধবনিতা যে কেউ স্ক্যাবিস আক্রান্ত হতে পারেন।
স্ক্যাবিস (Scabies) একটি ছোঁ’য়াচে ত্বকের রোগ বা চর্মরোগ । এটি Sarcoptes scabiei নামক ক্ষুদ্র নামক পরজীবীর সংক্রমণে স্ক্যাবিস হয়ে থাকে, যা মাক’ড়’সার মত দেখতে এর বৈজ্ঞানিক নাম বা বায়োলজিক্যাল নাম (mite)। এই মা’কড়’সা ত্বকের উপরিভাগে গ’র্ত তৈরি করে এবং ডিম পাড়ে, যার ফলে ত্বকে তীব্র চু’ল’কানি এবং ফু’সকুড়ি দেখা দেয়।
‘স্ক্যাবিস’ হয়েছে এমন কারো সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে জীবাণু একজন থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়ায়।
চিকিৎসক মি. মামুন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সাধারণত গরমের সিজনে এখন বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ, স্ক্যাবিস বেশি ছড়ায়। সারা বছরই থাকে। কিন্তু এই সিজনে বেশি ছড়ায়।”
কীভাবে স্ক্যাবিস (Scabies) ছড়ায়, এমন প্রশ্নে মি. মামুন প্রধান ৩টি কারণ উল্লেখ করেন বলেন,
১. ঘনবসতিপূর্ণ যেমন বস্তি এলাকা, হোস্টেল- যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন, সেখানে স্ক্যাবিস বেশি হয়।
২. যারা নিয়মিত কাপড়-চোপড় ধোয় না, নিয়মিত গোসল করে না অর্থাৎ যারা অপরিচ্ছন্ন থাকে, তাদের মাধ্যমে এই পরজীবী বেশি আক্রমণ করে।
৩. পরিবারের একজন সদস্যের স্ক্যাবিস রোগ হলে, পরিবারের বাকি সদস্যরা সচেতন না হলে ।

‘স্ক্যাবিস’ (scabies) লক্ষণ বা উপসর্গ কী?
‘স্ক্যাবিস’ এর প্রধান উপসর্গ হলো এ রোগে আক্রান্ত হলে সারা শরীর চুলকাতে থাকে।
চিকিৎসকরা জানান, শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে ভাঁজে যেমন দুই আঙুলের ফাঁক, কোমর, ঘাড়, নিতম্বে, যৌনাঙ্গে, হাতের তালুতে, কবজিতে, বগলের নিচে, নাভি ও কনুইয়ে এ রোগের সংক্রমণ বেশি হয়।
এসব স্থানে ছোট ছোট লাল দানাদার র্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠে। যা খুব চুলকায়। এগুলো থেকে পানির মতো তরল বের হতে পারে। সাধারণত রাতে চুলকানি বেশি হয়।
আক্রান্ত স্থানে চুলকানির ফলে ক্ষত হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে অন্য সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।
তবে এ রোগের উপসর্গ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভিন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য ধরনের উপসর্গ নিয়ে এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ মি. মামুন বলেন, “দেখা গেছে একটা বাচ্চা ঠাণ্ডা – কাশি, জ্বর নিয়ে আসছে সাথে Scabies আছে। একটা বাচ্চা নিউমোনিয়া নিয়া আসছে সাথে স্ক্যাবিস। আবার ডায়রিয়ার সাথে স্ক্যাবিসও আছে- এমন শিশু রোগী বেশি।
কিন্তু পূর্ণবয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে লাল দানা দানা স্ক্যাবিস হলেও ‘সেকেন্ডারি ইনফেকশন’ হলে জ্বর বা অন্য উপসর্গ পাওয়া যায় বলে জানান চিকিৎসকরা।

Healthx Doctor Poll Has The Best Dermatologist In Dhaka, Consult Today
‘স্ক্যাবিস’ (scabies) কতদিন স্থায়ী হয়?
Scabies সাধারণত সঠিক ও সম্পূর্ণ চিকিৎসা শুরু করার পর ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে নিরাময় হয়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক মাথায় রাখতে হবে:
চিকিৎসা শুরু করলে:
স্ক্যাবিস জীবাণু (সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই মাইট) সাধারণত একবারের টপিকাল ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যায়। তবে চুলকানি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে, কারণ শরীর তখনও মৃত মাইট এবং তাদের বর্জ্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়।
চিকিৎসা না করলে:
Scabies বহু সপ্তাহ বা মাস ধরে চলতে পারে এবং অন্যদের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
ঘন ঘন পুনঃসংক্রমণ ঘটতে পারে, বিশেষ করে যদি পরিবারের অন্য সদস্যরা একসাথে চিকিৎসা না নেন।
‘স্ক্যাবিস’ (scabies) রাতে শরীর চুলকায় কেন?
রাতের বেলা চুলকানি, বা নিশাচর প্রুরিটাস, প্রায়শই শরীরের প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান ছন্দের ফলে হয়। রাতে, শরীর বেশি প্রদাহজনক সাইটোকাইন এবং কম অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি কর্টিকোস্টেরয়েড নিঃসরণ করে। রাতেও ত্বক বেশি জল হারায়, ফলে শুষ্কতা দেখা দেয়। রাতে কম বিভ্রান্তি চুলকানিকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।
স্ক্যাবিস নিরাময়ের বা চিকিৎসার উপায় কী?
চিকিৎসকরা বলছেন ‘Scabies’ দুই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটা প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা, আরেকটা প্রতিকার।
সাধারণত প্রতিরোধমূলক পরামর্শগুলোই চিকিৎসকরা বেশি দিয়ে থাকেন।
মি. মামুন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যাতে স্ক্যাবিস না হয় বা না ছড়ায়, সেজন্য প্রতিরোধমূলক পরামর্শগুলোই আমরা দিয়ে থাকি। কারণ পরিবারের একজন সদস্যের স্ক্যাবিস রোগ হলে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে যায়। তাই সচেতন থাকতে হবে। একজনের শুধু চিকিৎসা নিলে হবে না, কারণ এটা যেহেতু ছোঁয়াচে একজনের থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়ায়- তাই সবারই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
- গরম পানি দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল করতে হবে।
- সাবান দিয়ে গোসল করার পর শরীর ভালো করে মুছে শুকাতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গলা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গায় লোশন বা ক্রিম লাগাতে হবে। এরপর ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর আবার সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। এক সপ্তাহ এভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ওষুধ খেতে হবে।
- রোগীর বিছানার চাদর, বালিশের কভার, গামছা- তোয়ালেসহ ব্যবহৃত অন্যান্য কাপড় নিয়মিত গরম পানিতে ফুটিয়ে পরজীবী-মুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে পোশাক আয়রন করে নিতে হবে। কারণ জীবাণুগুলো কাপড়ে লেগে থেকে সংক্রমণ ঘটায়।
- ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
- যেসব খাবার খেলে রোগীর অ্যালার্জি হয়, সেসব এড়িয়ে চলতে হবে।
- স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুষ্টিকর খাবার ও ফলের রস খেতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও তরল খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
- রোগ সেরে যাওয়ার পরও রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র এভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

শরীরে পানিশূন্যতা না হলে চর্ম রোগ কম হয় বলে চিকিৎসকরা আক্রান্তদের সুষম ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।আক্রান্ত রোগী সুস্থ হতে সাধারণত সাতদিন লাগে।
তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সুস্থ হতে পনেরো্ দিন থেকে মাস-খানেক বা ইনফেকশন হলে তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা।
চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ মাসিউল আলম হোসেন বলেন, “প্যারাসাইটটা চামড়ার উপরিভাগে থাকে। এরা ভেতরে যায় না। চামড়ার উপরিভাগেই চলাচল করে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা দেয়। নিয়মানুযায়ী প্রথম যে ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়, তাতে এগুলো মারা যাবে।”
ভিটামিন সি–র অভাবে ত্বকের নানা রোগ হতে পারে। ত্বক জ্বালা করে, চুলকায়।কাজেই আক্রান্ত জায়গায় সাবান, জীবাণুনাশক ইত্যাদি না লাগানোই উচিত। এ ছাড়া চুলকানি বাড়ে এমন অ্যালার্জি জাতীয় খাবারও এড়ানো উচিত। স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পারমিথ্রিন ক্রিম বা বেনজাইল বেনজোয়েট লোশন ইত্যাদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে
“তারপরে আবার পাঁচ বা সাতদিন পরে রিপিট করাই। সেক্ষেত্রে প্যারাসাইটের ডেড যে উপাদানগুলো থাকে সেটা আবার চুলকানি বাড়ায়। তখন এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আবার মেডিসিন দিতে হয়।”
তবে চুলকানি হলেই তা ‘স্ক্যাবিস’ রোগ নয় বলে জানান চিকিৎসকরা। তাই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য Best Dermatologist এর পরামর্শ নিতে হবে।

‘স্ক্যাবিস’ (scabies) প্রতিরোধ পরামর্শঃ
১. আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
২. বিছানা, বালিশ, তোয়ালে ও কাপড় প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকান।
৩. চুলকানি কমে গেলেও চিকিৎসা সম্পূর্ণ করুন।
৪. রোগ সবার হোক আর না হোক, পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা করুন—even if asymptomatic.
‘স্ক্যাবিস’ (scabies) বিশেষ সতর্কতাঃ
রোগ নিরাময়ের পরেও চুলকানি ২–৪ সপ্তাহ থাকতে পারে, যা post-scabietic pruritus নামে পরিচিত। এতে ভয়ের কিছু নেই, তবে সহায়ক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীকে আক্রান্ত অবস্থায় অবহেলা না করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে উৎসাহিত করুন।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা কী? কীভাবে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়?
চিকিৎসকরা বলছেন, শত শত চর্ম রোগের মধ্যে এই ‘স্ক্যাবিস’ রোগই সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে।
একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমণ দ্রুত হলেও রোগটি প্রতিরোধযোগ্য।
তবে সঠিক চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।অনুজীব সংক্রমণের ফলে শরীরে ব্যাথা, জ্বর অনূভুত হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে যায়।
ফলে এ রোগে সংক্রমণের হার ঠেকাতে ওই ব্যক্তিরই শুধু নয়, বরং ওই পরিবার বা একই ঘরে অবস্থানকারী সব সদস্যদের একসাথে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
আপনার যদি স্ক্যাবিসের লক্ষণ থাকে, তবে স্বল্প সময়ে চিকিৎসা শুরু করা এবং HealthX-এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ Skin Doctor পরামর্শ নেওয়া-ই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
📲 এখনই HealthX App অনলাইন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন —
আপনি যদি দ্রুত এবং সহজে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খুঁজতে চান বা নির্ভরযোগ্য ওষুধ বাসায় পেতে চান, তাহলে HealthX আপনার জন্য সেরা সমাধান!
🔹 বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খুঁজুন ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন: Find Doctors Here
🔹 বাসায় বসে প্রয়োজনীয় ওষুধ পান: Order Medicine Online
HealthX এর মাধ্যমে আপনি বিশ্বস্ত চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মেসি সংযোগ পেতে পারেন, যাতে আপনার স্বাস্থ্য নিরাপদ থাকে এবং আপনি দ্রুত চিকিৎসা পেতে পারেন।
দ্রুত ও সহজ অনলাইন ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট
নির্ভরযোগ্য ওষুধ বাসায় ডেলিভারি
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ এক ক্লিকে
নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন – HealthX এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিন!
আরও জানুন-
চিকিৎসায় 17 টি সবচেয়ে উন্নত দেশ । জেনে নিন কোন দেশের চিকিৎসা সবচেয়ে উন্নত?