আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। এরা শরীরের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে, রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণ করে। কিডনি শরীরের লবণ, পটাশিয়াম এবং অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। যখন কিডনি তার কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না, তখন শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই, কাদের কিডনি দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তা জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এখন আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব:
কিডনি রোগ কি?
কিডনির রোগ বলতে বোঝায় কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া। এটি একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। যখন লক্ষণ দেখা দেয়, তখন সাধারণত কিডনির কার্যকারিতা অনেকটা কমে যায়।

বিভিন্ন কারণে কিডনি দ্রুত নষ্ট হতে পারে। নিচে কিছু প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
কাদের কিডনি দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
- ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্ত শর্করা কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
- উচ্চ রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- বংশগত কিডনি রোগ : কিছু কিডনি রোগ বংশগত কারণে হতে পারে, যেমন পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ।
পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। - কিডনিতে সংক্রমণ : বারবার কিডনিতে সংক্রমণ হলে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
- কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া : কিছু ঔষধ, যেমন ব্যথানাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক , দীর্ঘকাল ধরে সেবন করলে কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন : অতিরিক্ত ওজন কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান : ধূমপান কিডনির রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- বয়স : বয়সের সাথে সাথে কিডনির কার্যকারিতা কমতে থাকে।
- প্রস্রাবের পথে বাধা : যদি কোনো কারণে প্রস্রাবের পথে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ : অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

কিডনি রোগের লক্ষণ :
কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- প্রস্রাবের পরিমাণে পরিবর্তন
- প্রস্রাবে রক্ত
- পায়ে বা শরীরে ফোলা
- ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব বা বমি
- শ্বাসকষ্ট
- ত্বকে চুলকানি
কিভাবে কিডনি রক্ষা করা যায়?
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- ধূমপান পরিহার করুন।
- অতিরিক্ত ঔষধ সেবন পরিহার করুন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান ।
- রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
কিডনি রোগের চিকিৎসা :
কিডনির চিকিৎসা, রোগের কারণ ও অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- ঔষধ
- খাদ্য পরিবর্তন
- ডায়ালাইসিস
- কিডনি প্রতিস্থাপন
আরও জানুন-
মাথা নিয়ে মাথাব্যথা!
শরীরের ইমিউনিটি বাড়ুক ন্যাচারালি
প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা নিয়ে কিছু কথা
চোখের জটিল রোগ ‘অপটিক নিউরাইটিস’