হেমোরয়েড বা পাইলস একটি বহুল পরিচিত ব্যাধি। শতকরা ১০ জন ব্যক্তির মধ্যে ৮ জন ব্যক্তিই পাইলস বা হেমরয়েডের শিকার।কিন্তু লজ্জা কিংবা সামাজিক প্রতিবন্ধতার জন্য অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না।আবার অনেকে হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন তবে সাময়িক ব্যথা নিরাময়ের জন্য।কিন্তু আধুনিকতার এই যুগে অনেকেই জানেন না কোনোরকম অস্ত্রোপচার ছাড়া পাইলসের চিকিৎসা সম্ভব।
হেমোরয়েড বা পাইলস মূলত মলদ্বার বা মলদ্বারের নিচের শিরাগুলোর ফুলে যাওয়া এবং প্রসারিত হওয়াকে বোঝায়।তবে হেমোরয়েড দুই ধরণের হয়ে থাকে।
১)বাহ্যিক হেমোরয়েড-
বাহ্যিক হেমোরয়েড হল একটি সাধারণ সমস্যা যা মলদ্বারের চারপাশের ত্বকে ঘটে। এটি অনেক অস্বস্তি এবং ব্যথার কারণ হতে পারে। বাহ্যিক হেমোরয়েডগুলো সাধারণত মলদ্বারের ত্বকের নিচে ফোলা থাকে এবং এতে চুলকানি, ব্যথা ও রক্তপাত হতে পারে। কখনও কখনও, এই হেমোরয়েডগুলি রক্ত জমাট বাঁধে, যা তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে। জমাট বাঁধা রক্ত যখন গলতে শুরু করে, তখন সাধারণত ত্বকে একটি ট্যাগ রেখে যায় যা চুলকানি ও বিরক্তির কারণ হতে পারে। থ্রম্বোজড (জমাট বাঁধা) হেমোরয়েড সাধারণত বেগুনি বা নীল রঙের হয় এবং মাঝে মাঝে অতিরিক্ত রক্তপাত ঘটতে পারে। সাধারণত এই ধরণের হেমোরয়েড সময়ের সাথে সাথে নিজেই উন্নতি ঘটে, তবে ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
২)অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড-
মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে সৃষ্টি হয় এবং সাধারণত অস্বস্তি সৃষ্টি করে না। এই ধরনের হেমোরয়েডগুলো বড় না হলে অনেক সময় দেখা যায় না, তবে সেগুলি রক্তপাত করতে পারে যা টয়লেট পেপারে রক্তের দাগ বা টয়লেটে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের রূপে প্রকাশ পেতে পারে। অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড প্রল্যাপস হতে পারে, অর্থাৎ তারা মলদ্বারের বাইরে প্রসারিত হতে পারে, যা বেদনাদায়ক হতে পারে। প্রল্যাপস হওয়া অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডগুলি স্নায়বিক অঞ্চলগুলির সংস্পর্শে আসার কারণে ব্যথা ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে।তবে উপযুক্ত চিকিৎসা ও জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পাইলসের কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ হল:
১)মল ত্যাগ করার সময় কোন ব্যথা ছাড়াই রক্তপাত।
২)মলদ্বার এলাকায় চুলকানি।
৩)পায়ূ এলাকায় ব্যথা বা অস্বস্তি।
৪)মলদ্বারের কাছে সংবেদনশীল বা বেদনাদায়ক পিণ্ডের উপস্থিতি।
৫)মলদ্বারের চারপাশে ফুলে যাওয়া।
হেমোরয়েড বা পাইলস হওয়ার কারণ-
মলদ্বারের চারপাশের শিরাগুলিতে প্রসারিত বা চাপের ফলে সেগুলি ফুলে উঠতে বা ফুলে যেতে পারে যার ফলে হেমোরয়েড হতে পারে। এই কারণে হতে পারে:
১)বার্ধক্যজনিত কারণে ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া।
২)পায়ুপথ সহবাস ও মল পাস করার সময় অতিরিক্ত স্ট্রেনিং।
৩)টয়লেট সিটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা।
৪)কম ফাইবারযুক্ত ডায়েট,স্থূলতা ও গর্ভাবস্থা।
৫)বারবার ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের পর্ব।
তবে কিছু পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ হতে পারে –
১) পায়ুপথের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
২) উষ্ণ গরম পানিতে দিনে কয়েকবার পায়ুপথ ভিজিয়ে নিন।
৩)পায়ুপথে ফুলে গেলে বরফ দেয়া যায় ।
৪) চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত মলম ব্যবহার করুন পাইলস সারাতে ।
৫) প্রদাহ বা সংক্রমণের দ্রুত চিকিৎসা নিন।
৬) প্রতিদিন প্রচুর আঁশযুক্ত সবজি, ফলমূল ও খাবার গ্রহণ করবেন। গোশত, কম আঁশ ও বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, কড়া মশলা, ফাস্টফুড ইত্যাদি পরিহার করুন।
৭) বেশি করে পানি পান করুন।
৮) কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করুন, মলত্যাগে কখনো বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না, আটকে রাখবেন না।
৯) ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। এছাড়া, নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। তাই শরীরচর্চা করুন।
পাইলসের চিকিৎসা-
পাইলস কি পর্যায়ে আছে তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। পাইলসের বেশিরভাগ, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চিকিৎসা এখন অস্ত্রোপচার লাগে না। বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তগুচ্ছটিকে নষ্ট করে দেয়া হয়। ব্রেনলাইগেশন আছে, লেজার থেরাপি আছে, হিট কুয়াগুলেশন আছে- বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া যায়। এগুলো হচ্ছে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে। সাধারণত তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে অস্ত্রোপচার লাগে। জিনিসটি যেহেতু বের হয়ে আসে এটি অস্ত্রোপচার করে সরাতে হয়। তবে রোগী যদি আগে চিকিৎসায় আসে, তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও এখন নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে। বাংলাদেশও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পথিকৃত। যেমন, পর্যায়-চার পাইলসের ক্ষেত্রে মিউকোসাল এক্সিশন করা হচ্ছে, আগে অস্ত্রোপচারের পরে অ্যানাল স্টেনোসিসের একটা আশঙ্কা থাকত, এতে মলদ্বার ছোট হয়ে যেত। তবে এখন মিউকোসোটা রেখে দিয়েই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এর ফলাফল খুবই ভালো। পাইলসের আধুনিকতম চিকিৎসাগুলোই এখন বাংলাদেশে হচ্ছে।Healthx BD
–বাতের সমস্যার কারণ-লক্ষণ ও চিকিৎসা
1 Comment
Pingback: এমপক্সের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিরোধ- - HEALTHxBD