আমাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোনাল গ্রন্থি রয়েছে, যেগুলি নানা ধরনের হরমোন উৎপন্ন করে। এদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি হল থাইরয়েড, যা গলার সামনের দিকে অবস্থিত এবং দেখতে প্রজাপতির মতো। তাই এটিকে প্রজাপতি গ্রন্থিও বলা হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড নামের হরমোন নির্গত হয়। নানা কারণে এই গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। দেশে প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ থাইরয়েড হরমোনের সমস্যায় ভুগছে।
থাইরয়েড হরমোন আমাদের বিপাক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের তাপমাত্রা, ত্বক, চুল, হৃদস্পন্দন, পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম, প্রজননস্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের গঠন, কোষের গঠন, ওজন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই, হাইপোথাইরয়েডিজম হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা-
থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ কমে গেলে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেড়ে গেলে হাইপারথাইরয়েডিজম হয়। থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন মূলত আয়োডিনের উপর নির্ভর করে। হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে গ্রেভস রোগ, বহু প্রকোষ্ঠের গলগণ্ড, বিষাক্ত এডিনোমা, থাইরয়েডের প্রদাহ এবং অতিরিক্ত পরিমাণে আয়োডিন গ্রহণ। অপরদিকে, আয়োডিনের অভাব ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।
খাবারের তালিকাসমূহ-
কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোকে গয়ট্রোজেনিক ফুড বলা হয় এবং এগুলো হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম—উভয় ক্ষেত্রেই এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবারে গয়ট্রোজেন নামক উপাদান থাকে যা আয়োডিনের শোষণকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, সরিষার শাক, মুলা এবং শজিনা। তবে, যদি এসব খাবার ভালোভাবে রান্না করা হয়, তাহলে তা নিরাপদ হতে পারে। এছাড়া, চা এবং কফির ক্যাফেইন থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এগুলোও সীমিত করা উচিত।
গমযুক্ত খাবারও থাইরয়েডকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই আটা এবং ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার কম খাওয়া উচিত বা পরিহার করা উচিত। সয়াবিনজাত খাবারও কম পরিমাণে খাওয়া বা বাদ দেওয়া উচিত। এছাড়া, বেশি সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, তাই প্যাকেটজাত খাবার ব্যবহার করা বন্ধ করা উচিত।
হাইপারথাইরয়েডিজমে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন-
যদি আয়োডিনের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়, তাহলে হাইপারথাইরয়েডিজম দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে দুধ, ছানা, পনির, দই, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনা এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লবণের পরিবর্তে পিংক সল্ট ব্যবহার করা ভালো।
হাইপোথাইরয়েডিজমে যেসকল খাবার খাবেন-
আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়। তাই এ ক্ষেত্রে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, ছানা, পনির, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, স্পিরুলিনাসহ সব সামুদ্রিক খাবার বেশি করে খেতে হবে।
থাইরয়েড গ্রন্থির যত্নের ক্ষেত্রে খাবারের তালিকা-
আয়োডিনযুক্ত খাবার-থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পর্যাপ্ত আয়োডিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এর মধ্যে রয়েছে আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, ছানা, পনির, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, এবং সামুদ্রিক স্পিরুলিনা।
সেলেনিয়াম- থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় করতে সেলেনিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সেলেনিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ জন্য ডিম, মুরগি, ওট, বাদাম, টুনা মাছ ইত্যাদি খেতে হবে।
জিংক- থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় রাখতে জিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি টিএসএইচ নামের হরমোন নিঃসরণ প্রভাবিত করার মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ নিশ্চিত করে। তাই জিংকের অভাবে থাইরয়েডের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। চিংড়ি, গরু, খাসি ও মুরগির মাংস, কাঁকড়া, ঝিনুক, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ জিংকের ভালো উৎস। জিংক ও সেলেনিয়াম একত্রে থাইরয়েড গ্রন্থিকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।Healthx BD
আরও জানুন-
–নিমপাতা দিয়ে ত্বক ও চুলের রূপচর্চা