মেনোপজ কী?
Menopause হলো নারীর জীবনের এমন একটি সময় যখন তার মাসিক ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। যখন একজন নারীর ১২ মাস একটানা মাসিক হয় না, তখন তাকে মেনোপজ হয়েছে বলে ধরা হয়। মেনোপজ, নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক পর্যায়, যা শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। এই সময়ে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, যার ফলে নানা শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মেনোপজ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত:
- পেরিমেনোপজ: এটি মেনোপজের আগের পর্যায়, যখন মাসিক অনিয়মিত হতে শুরু করে। এই সময়ে হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে, যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- মেনোপজ: যখন ১২ মাস একটানা মাসিক বন্ধ থাকে, তখন তাকে মেনোপজ বলে।
- পোস্টমেনোপজ: মেনোপজের পরের পর্যায়, যখন শরীর নতুন হরমোনাল অবস্থার সাথে মানিয়ে নেয়।

মেনোপজের শারীরিক লক্ষণ:
হট ফ্ল্যাশ: হঠাৎ করে শরীর গরম লাগা, যা ঘাড় ও মুখের দিকে বেশি অনুভূত হয়।
রাতের ঘাম: রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
যোনি শুষ্কতা: যোনিপথে শুষ্কতা ও অস্বস্তি।
ঘুমের সমস্যা : ঘুম আসতে অসুবিধা বা রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
মূত্রাশয় সমস্যা: ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা।
মেনোপজের মানসিক প্রভাব:
মেজাজের পরিবর্তন (Mood swings): হঠাৎ করে মন খারাপ লাগা, বিরক্তি, অস্থিরতা বা কান্না পাওয়া।
উদ্বেগ (Anxiety): অতিরিক্ত চিন্তা, ভয় বা অস্থিরতা।
বিষণ্ণতা (Depression): মন খারাপ লাগা, কোনো কিছুতে আগ্রহ না পাওয়া, হতাশা বা নিরাশ বোধ করা।
স্মৃতিভ্রংশ (Memory problems): মনে রাখতে অসুবিধা বা মনোযোগের অভাব।
মনোযোগের অভাব (Difficulty concentrating): কোনো কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা।
আত্মবিশ্বাসের অভাব (Loss of self-esteem): নিজের উপর বিশ্বাস কমে যাওয়া।
কেন মানসিক প্রভাব পড়ে?
- মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেনের অভাব, মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলির উপর প্রভাব ফেলে, যা মেজাজ, ঘুম এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- এছাড়াও, শারীরিক উপসর্গগুলিও মানসিক কষ্টের কারণ হতে পারে। যেমন, রাতের ঘাম বা ঘুমের সমস্যার কারণে দিনের বেলা ক্লান্তি ও বিরক্তি লাগতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য মোকাবেলার উপায়:
মেনোপজের সময় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু কার্যকর উপায়:
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
- সুষম খাবার: ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হালকা ব্যায়াম করুন, যেমন – হাঁটা, যোগা বা সাঁতার।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: এই অভ্যাসগুলি উপসর্গ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা:
- থেরাপি: কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) বা ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি (IPT) এর মতো থেরাপি মানসিক উপসর্গ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- সাপোর্ট গ্রুপ: একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন নারীদের সাথে কথা বললে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
- ধ্যান ও যোগা: এই পদ্ধতিগুলি মন শান্ত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
- হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT): কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন, যা হরমোনের অভাব পূরণ করে উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। তবে, HRT এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ কখন নিতে হবে?
যদি মানসিক উপসর্গগুলি দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তাহলে অবশ্যই একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পরিবারের ভূমিকা:
- মেনোপজের সময় পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ও সহানুভূতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পরিবারের উচিত নারীকে মানসিক ও শারীরিক সহায়তা প্রদান করা এবং তার অনুভূতিগুলি বোঝার চেষ্টা করা।
কিছু অতিরিক্ত টিপস:
- নিজের যত্ন নিন এবং নিজের জন্য সময় বের করুন।
- নতুন কিছু শিখুন বা পছন্দের কোনো শখে মনোযোগ দিন।
- সামাজিক কার্যকলাপ এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন।
- ইতিবাচক থাকুন এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।Healthx BD
আরও জানুন-
পিসিওএসের কারণে হতে পারে বন্ধ্যত্ব