মাথাব্যথায় ভোগেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। মাথাব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মাথাব্যথার শিকার, যার মধ্যে টেনশন টাইপ মাথাব্যথা সবচেয়ে বেশি। মাথাব্যথার কারণগুলো অন্তর্ভুক্ত: মাইগ্রেন, সাইনাসের প্রদাহ, ক্লান্তি, পানিশূন্যতা, ঘুমের অভাব, দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, মৃগী রোগ, ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মাথায় আঘাত, ব্রেইনের টিউমার, দাঁতের রোগ, দ্রুত ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধূমপান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা টেনশন বা দুশ্চিন্তার ফলে হয়, কারণ টেনশনের কারণে মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হয়, যা মাথাব্যথা শুরু করে।
যা করতে হবে:সুশৃঙ্খল পারিবারিক জীবন ও আনন্দময়, ঝামেলাবিহীন জীবনই টেনশন এবং তার ফলস্বরূপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
১)মাইগ্রেন: মাথাব্যথার মধ্যে মাইগ্রেনের ব্যথা সবচেয়ে তীব্র। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত মাথার এক পাশে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। এটি কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি ভাবও এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
যা করতে হবে: চিকিৎসকের অধীনে নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করা উচিত। এছাড়া মেডিটেশন, সঠিক সময়ে ঘুমানো, অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা, কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা ও উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশ থেকে দূরে থাকা, পিসি ও টিভির সামনে বেশি সময় না কাটানো, এবং প্রচুর পানি পান করা মাইগ্রেনের জন্য উপকারী।
২)ক্লাস্টার: ক্লাস্টার মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হয়, কিন্তু আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ব্যথা এক পাশে শুরু হয়ে অনেক সময় চোখের পেছনেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নাক ও চোখের আশপাশ লাল হয়ে যায়। তীব্র আলো, গন্ধ এবং শব্দে এ ধরনের মাথাব্যথা বৃদ্ধি পায়।
যা করতে হবে: মাইগ্রেন ও ক্লাস্টারের চিকিৎসা প্রক্রিয়া একই, তবে তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ‘ভেরাপামিল’ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। এছাড়া অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার এবং সঠিক সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গ্রহণ করা এসব সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে সহায়ক।
৩)সেকেন্ডারি: যখন মাথাব্যথার উৎস মাথার বাইরে থাকে, তখন তাকে সেকেন্ডারি মাথাব্যথা বলা হয়। যেমন—গ্লুকোমা, দাঁতের সমস্যা, আঘাত, মস্তিষ্কের টিউমার, মৃগী রোগ এবং ব্রেইনের রক্তনালিতে ইনফেকশন।
যা করতে হবে: যদি কারও সেকেন্ডারি মাথাব্যথা থাকে, তাহলে বিলম্ব না করে একজন স্নায়ু বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বিলম্ব করলে জটিলতা বাড়তে পারে।
৪)সাইনাসের প্রদাহ: মাথার হাড়ের মধ্যে কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে, যাকে সাইনাস বলা হয়। চোখের পেছনে এবং নাকের দু’পাশে সর্দি জমে সাইনোসাইটিস বা প্রদাহ হতে পারে, যার ফলে বাতাস আটকে যায় এবং মাথাব্যথা হয়। এ ব্যথা সাধারণত কপাল, গালের দু’পাশ অথবা চোখের পেছনে অনুভূত হয় এবং মাঝে মাঝে জ্বরও অনুভূত হয়।
যা করতে হবে: সাইনাসজনিত মাথাব্যথায় অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কার্যকরী। এছাড়া গরম পানিতে গোসল বা গামলায় গরম পানি নিয়ে নাক দিয়ে বাষ্প টেনে নেওয়া আরাম দেয়। তীব্র মাথাব্যথার ক্ষেত্রে এক টুকরো কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে কপাল, চোখের ওপর বা নাকের দুই পাশে সেঁক দিলে সাইনাসের বন্ধ ভাব কমে যায় এবং আরাম পাওয়া যায়।
৫)হরমোনাল: নারীদের ঋতুকাল, গর্ভধারণ এবং মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হয়, যা মন-মেজাজের পরিবর্তন এবং মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট সেবনের পরও হরমোনের এই পরিবর্তন অনেকের জন্য মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
যা করতে হবে: নারীদের মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি উপকারী হতে পারে। টেনশনমুক্ত দৈনন্দিন জীবনযাপন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত পানি পানও সহায়ক।
অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন, চা-কফির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, অনিয়মিত ওষুধ সেবন, রোদে বা অতিরিক্ত গরমে দীর্ঘ সময় থাকা, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকা এবং মানসিক চাপ মাথাব্যথার কারণ। তাই এসব বিষয়ে সচেতন থাকলে মাথাব্যথা অনেকাংশে কমে আসবে।Healthx BD
আরও জানুন-
–শরীরের ইমিউনিটি বাড়ুক ন্যাচারালি