ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। কাজেই শারীরিক সুস্থতার জন্য সুস্থ ও সুন্দর ত্বক যে অপরিহার্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বছর ঘুরে আবারও শীতের আগমন। শহরে শীত আসি আসি করলেও গ্রামে জেঁকেই বসেছে। শীতকাল সবারই পছন্দের ঋতু। সবার পছন্দের হওয়ার পরও শীত কিন্তু ত্বককে শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। এই সময় ঠোঁট ফেটে যায়। অনেকের রক্তও বের হয়। ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখার জন্য অতিরিক্ত সূর্যরশ্নি এড়িয়ে চলতে হবে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে শরীরকে খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এ জন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রন্থি নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শীতকালে আর্দ্রতার অভাবে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ। তাই ত্বক মলিন এবং অনুজ্জ্বল দেখায়। যাদের ত্বক আগে থেকেই শুষ্ক প্রকৃতির, তাদের সমস্যা শীতকালে আরও বেড়ে যায়। হাত-পা এমনকি মুখের চামড়া উঠতে থাকা, ত্বক ফেটে রক্ত বের হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই শীতের শুরু থেকেই ত্বক নিয়ে সচেতন থাকা দরকার।
গোসল
অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে থাকে। কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বা সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার
কোনো রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ক্রিম, লোশন, জেল এমনকি সাবান হিসেবে ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
পোশাক
টাইট ফিট এবং সিনথেটিক পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিলেন, নাইলন ইত্যাদি পরিহার করুন।
হিউমিডিফায়ার
ঘরে জলীয় বাষ্পের অনুপাত ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে রুমের জলীয় বাষ্প ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মনে রাখবেন, একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগছেন শীতে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ও পরজীবী জনিত ত্বকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কাজেই শীতে ত্বকের যত্ন নিন। সর্বোপরি—
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন
২. খোলামেলা ও আলোকিত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন
৩. চিন্তা মুক্ত থাকুন এবং
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
এসব নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এই শীতের সময়টা আপনার জন্য অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

অনেক সময় শীতে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে চুলকানি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রভৃতি হয়ে থাকে। মাথার ত্বকে খুশকির উপদ্রব এবং চুলকানিও বেড়ে যায়। অনেক সময় এই খুশকি চোখের পাপড়ি, ভ্রু, পুরুষদের দাড়িতেও ছড়িয়ে যায়। একটা সময় লোমকূপ বন্ধ করে ছোট ছোট দানা বা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সোরিয়াসিস রোগের প্রকোপ শীতকালে বৃদ্ধি পায়। এ অসুখে হাঁটু, কনুই, মাথার ত্বক থেকে মাছের আঁশের মতো চামড়া উঠতে থাকে। ৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এবং কখনো কখনো বড়দের মধ্যে অ্যাটোপিক ডারমাটাইটিস নামে ত্বকের রুক্ষতাজনিত সমস্যা দেখা যায়। যাদের এই সমস্যা থাকে, শীতকালে তাদের ত্বক আরও শুকিয়ে চুলকানি বেড়ে যায়। যেসব শিশুর অ্যাজমা থাকে, তাদের এটি বেশি হয় এবং এদের ত্বকে সংক্রমণও বেশি হয়। উলের কাপড়, পুরোনো লেপ থেকেও ত্বকে ও শরীরে অ্যালার্জি বেড়ে যায়।
করণীয়
- যেহেতু বেশির ভাগ সমস্যাই শুষ্কতার কারণে বৃদ্ধি পায়, তাই শুষ্কতা এড়িয়ে চলতে হবে। অর্থাৎ ত্বকের ধরন বুঝে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হায়ালুরনিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা ভালো।
- শীতকালে ঠান্ডার কারণে অনেকেই প্রতিদিন গোসল করতে চান না বা করেন না। এটা ঠিক নয়। ত্বক অপরিষ্কার থাকলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই কুসুমগরম পানি ব্যবহার করে গোসল করতে হবে। একান্তই না পারলে ত্বক তোয়ালে ভিজিয়ে মুছে নিতে হবে। গোসলের পরপর আধভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো।
- খুশকির সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মমাফিক কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
- শীতকালে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না। ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে এই সময়ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাইরে গেলে রোদচশমা, টুপি ব্যবহার করতে পারেন।
- অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে মাঝেমধ্যে পানির ঝাপটা দিলে আর্দ্র থাকবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। এতে রুক্ষতা বৃদ্ধি পায়। হালকা কুসুম-গরম পানি ব্যবহার করুন।
- পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধ করতে পায়ে নিয়মিত ভেসলিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যাদের সোরিয়াসিস, অ্যাটোপিক ডারমাটাইটিস, বংশগত অ্যাজমা এবং অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের শীতের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মমতো চলতে হবে।