বেশ কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। শীতও বাড়ছে, আর শীত শীত বাড়ার সাথে হাঁপানির সমস্যাও বাড়ে। আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য বছরের যে কোনও সময়ের থেকে শীতে হাঁপানি রোগীদের সমস্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি কখনো পুরোপুরিভাবে ভালো হয় না। এই রোগ কখনো নিয়ন্ত্রণে থাকে, আবার কখনো কখনো বেড়ে যায়, বিশেষ করে শীতে এর প্রকোপ খুব বেশি । অনেক সময় কিছু পরিস্থিতির কারণে হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে যেমন-ধুলাবালি, ধোঁয়া, পশমযুক্ত প্রাণী (কুকুর, বিড়াল), ধূমপান, গাড়ির বিষাক্ত গ্যাস, কল-কারখানার সৃষ্ট পদার্থ, বৃষ্টিতে ভেজা, শীতের কুয়াশা, ফুলের রেণু, বিশেষ কয়েকটি খাবার যেমন- চিংড়ি, ইলিশ, বোয়াল, গাজর, গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, পাকা কলা, আনারস, নারিকেল, কসমেটিকস ও অগণিত জানা-অজানা জিনিস আমাদের শরীরে হাঁপানির সমস্যা বাড়তে পারে। অনেক সময় ব্যায়াম করার সময় হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।
হাঁপানির উপসর্গ গুলো হলো-
- ঘড় ঘড় শব্দসহ শ্বাস-প্রশ্বাস
- শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হওয়া
- বুকে ব্যথা
- কাশি
হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় রোগীর শ্বাসনালিতে নিম্নোক্ত পরিবর্তন গুলো দেখা যায়
- শ্বাসনালি লাল ও ফুলে যাওয়ার ফলে সরু হয়।
- শ্বাসনালির চারপাশের মাংসপেশিসমূহ সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালিকে সরু করে দেয়। শ্বাসনালিতে অধিক পরিমাণ শ্লেষ্মা তৈরি হয়ে শ্বাসনালিতে বায়ুপ্রবাহ আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়।
হাঁপানি থেকে রক্ষা পেতে কিছু কিছু টিপস মেনে চলতে হবে যেমন-
- ব্যায়াম শরীরের জন্য খুব উপকার। কিন্তু যাদের হাঁপানি আছে তারা ভারী ব্যায়াম শুরুর আগে বয়স ও ফিটনেস অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এই সময় ঠান্ডা, শুষ্ক ও দূষিত বাতাস পরিহার করে কিছুটা আর্দ্র, বিশুদ্ধ ও উষ্ণ বাতাসে ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম করার সময় কখনো মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেয়া যাবে না । ঠান্ডা বাতাসে ব্যায়াম করার সময় আপনার নাক ও মুখ স্কার্ফ বা ফেস মাস্ক দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। কেননা ঠান্ডা বাতাসে আপনার হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের ঘরে কম্বল ও কার্পেট না রাখাই ভালো। কারণ, কম্বল ও কার্পেট এ বেশি ধুলা জমে। ম্যাট্রেস, বালিশ ও লেপকে ধুলা প্রতিরোধ করে এমন জিপারযুক্ত কাভার দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। চাদর ও কম্বল মাঝেমধ্যে গরম পানিতে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। খড় দিয়ে তৈরি করা কোনো বালিশ বা ম্যাট্রেস ব্যবহার করা যাবে না।
ঘরের ভেতরে ভ্যাপসা ও দমবন্ধ মনে হলে সেই পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন। ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন। পরিষ্কার ও খোলা হাওয়ার জন্য জানালা খোলা রাখুন। ধুলাযুক্ত কোনো কিছু ঝাড়ু দেওয়ার সময় দরজা-জানালা সম্পূর্ণ খুলে দিন।
- কাঠ, কেরোসিন বা গ্যাস দিয়ে রান্না করার সময় ধোঁয়া উঠলে উগ্র গন্ধ ছড়ালে রান্নাঘরের জানালা খুলে রাখুন। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে সমস্যা হবে না।
- বাড়িতে পোষ্য কোনো প্রাণী থাকলে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। নাকে-মুখে কাপড় বাঁধুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
- সর্দি হলে নাক মুছতে রুমাল নয়, পেপার টিস্যু ব্যবহার করুন। নাক, চোখমুখে ঘন ঘন হাত লাগাবেন না। সর্দি ঝাড়ার পর নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন। সর্দি-কাশি-ফ্লু-আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকা ভালো।