উৎসব মানেই ভরপেট খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু। বিরিয়ানি, চাইনিজ, মিষ্টিমুখ—আরও কত কিছু। তবে যাদের ডায়াবেটিস তাদের রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখা অনেক জরুরি। একটু অনিয়ম হলেই হতে পারে বিপদ! কিন্ত সামনে এতো বড় উৎসব—দুর্গাপূজা। এসময় মিষ্টিমুখ না করলে কি আর পূজার ভাব আসে?
From Google
তাই ওই কদিন ডায়েটে একটু অনিয়ম হয়ে যায় অনেকের। ওই সময়টাতে চেষ্টা করেও মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসে লাগাম টানতে পারেন না অনেকে।
উৎসবের দিনে মিষ্টি খেয়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন যেভাবে
এক.
পূজার দিনে মিষ্টি খাওয়া হবেই, তাই চা-কফিতে চিনি ও ক্রিমসহ দুধ মেশানো পুরোপুরি বন্ধ করে দিন। ভেষজ চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে ওজন ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
দুই.
চিনির বিকল্প কৃত্রিম মিষ্টি, কর্ন সিরাপ, ম্যাপেল সিরাপ, মধু, গুঁড়ো দুধ—এসবগুলোতেই চিনি থাকে। তাই এসব খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে।
তিন.
প্যাকেটজাত ফলের রস না খেয়ে বাড়িতে ফলের রস বানিয়ে খান। খুব ভাল হয় যদি গোটা ফল খেতে পারেন। খিদে পেলে ভাজা খাবারের বদলে ফল, ড্রাইফ্রুটস খান।
চার.
বেশি করে প্রোটিনজাতীয় খাবার খান। প্রোটিন খেলে ভুলভাল খাওয়ার ইচ্ছা কম হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে কিছু খেয়ে বের হবেন। তা হলে বাইরে খাওয়ার প্রবণতা কমবে।
পাঁচ.
খুব বেশি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে খেজুর, কিশমিশ অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। এছাড়া ক্লান্ত হলে ঠান্ডা পানীয়র পরিবর্তে ডাবের পানি খান।
হাঁটাচলা, খাবার অভ্যাস ও জীবনযাপনে পরিবর্তনসহ কিছু নিয়মকানুন মানলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব
From Google
বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস সমিতির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনটিকে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস হিসাবে পালন করছে এই খাতের স্বাস্থ্য কর্মীরা।
১৯৫৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই সমিতি। বর্তমানে এই সমিতির হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় নিবন্ধিত রয়েছেন ৪৫ লাখের বেশি ডায়াবেটিস কর্মী।
বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলছেন, যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অবশ্যই বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে।
এজন্য সবসময় হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়। এখন অনেক ফার্মেসিতে স্বল্পমূল্যে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়। সেখান ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যাদের শিশুর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাদেরকেও বছরে অন্তত একবার করে পরীক্ষা করাতে হবে।
সেই সঙ্গে বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:
- ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
- দুর্বল লাগা’ ও ঘোর ঘোর ভাব আসা
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
- সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া
- মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
- কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া
- শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা
- চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
- বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
- চোখে কম দেখতে শুরু করা