চিকিৎসার ভাষায় যদি কাউকে রাতের বেলায় বারবার ঘুম থেকে উঠতে হয় এটিকে নকটারিয়া বলে।
এই সমস্যার কারণে ঘুম এবং জীবনযাপন-দুটোতেই বিঘ্ন তৈরি হয়।
বয়স্ক মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এক হিসাব অনুযায়ী, ৭০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনই এই সমস্যায় ভোগেন।
নকটারিয়ার কারণ:
দুটি কারণে নকটারিয়া দেখা দিতে পারে। একটি হচ্ছে মূত্রথলির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মূত্র উৎপাদন বেড়ে যাওয়া। এই অবস্থাকে পলিইউরিয়া বলা হয়।
প্রথম কারণটির ক্ষেত্রে একটি অঙ্গের ধারণক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে, যা সাধারণত ৩০০-৬০০ মিলিলিটার হয়ে থাকে। দুটি কারণে এই ধারণক্ষমতা কমতে পারে। এগুলো হচ্ছে-
প্রথমত, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। পুরুষের ক্ষেত্রে এটা সাধারণত হয়ে থাকে বেনাইন প্রোস্টেটিক হারপারট্রফি নামে এক ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে। এই সমস্যায় পুরুষের প্রোস্টেট বড় হয়ে যায়।
নারীদের ক্ষেত্রে স্থূলতা এবং পেলভিক অরগ্যান প্রোল্যাপসের মতো সমস্যায় এই রোগ দেখা দিতে পারে। পেলভিক অরগ্যান প্রোল্যাপসের ক্ষেত্রে জরায়ু, মূত্রথলি বা মলদ্বার দুর্বল হয়ে পড়ে বা ঢিলা হয়ে যায়।
আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, অন্যান্য সমস্যা যেমন ওভারঅ্যাকটিভ ব্ল্যাডার সিনড্রোম, সংক্রমণ, সিস্টাইটিস ইত্যাদি স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও নকটারিয়া হতে পারে।
পলিইউরিয়ার মতোই নকটারিয়া বা রাতে মূত্র উৎপাদনের হার অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোনের প্রভাবে কমে যায়। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহে এই হরমোনের নিঃসরণ রাতে বেলা কমে যায়।
অন্যান্য অনেক রোগের কারণে নকটারিয়া দেখা দিলেও এটিই এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
এছাড়া ডায়াবেটিস, এডেমাটোস স্টেটস বা টিস্যুতে অত্যধিক তরল আটকে থাকার কারণে ফোলা ভাব, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, সন্ধ্যায় বেশি পরিমাণে তরল গ্রহণ, অতিমাত্রায় ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা তামাক গ্রহণের কারণেও এটি হতে পারে।
নকটারিয়া কীভাবে বন্ধ করা যায়?
নকটারিয়া আক্রান্ত প্রত্যেক মানুষের চিকিৎসা আলাদাভাবে করতে হবে। কারণ একেকজনের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে আলাদা আলাদা হাজারো কারণ থাকতে পারে।
তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখানে মৌলিক কয়েকটি টিপসের কথা উল্লেখ করা হলো, যা সাধারণভাবে সব বয়সের নকটারিয়া আক্রান্ত রোগীর কাজে আসতে পারে –
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত চার থেকে ছয় ঘণ্টা আগে তরল খাবার খাওয়া কমিয়ে আনুন। রাতের বেলা অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন গ্রহণ পরিহার করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করুন। ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে ফেলুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মূত্রত্যাগ করুন।
পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বা তলপেটের মাংসপেশির ব্যায়াম করুন। আপনার পায়ের টিস্যুতে যদি পানি জমে ফোলা ভাব থাকে তাহলে রাত নামার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই সেটিকে বিশ্রাম দিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: নকটারিয়া যদি কোন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হয়ে থাকে যেমন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ, তাহলে এসব রোগের চিকিৎসা করলে নকটারিয়ারও উপশম হতে পারে। সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাটা গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসার সময়সূচী পরিবর্তন করা: ডাইরেটিকস এবং এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইমের ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিয়ে আনা যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করা: ঘনঘন মূত্রত্যাগের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ পেতে অনেক সময় ব্যায়াম উপকারে আসতে পারে। এক্ষেত্রে তলপেটের মাংসপেশি ও মূত্রথলির ব্যায়াম এবং এ সংক্রান্ত চিকিৎসা ভাল কাজ করবে। তলপেটের মাংসপেশি ও মূত্রথলির ব্যায়ামের ফলে প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সহজ আসে।
প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে: সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে রোজ ওষুধ খাওয়া নিয়ে ভীতি বা অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় রোগীর সাথে আলাপের পর চিকিৎসক নকটারনাল পলিইউরিয়া বা রাত্রিকালীন অতি মূত্র উৎপাদন রোগের চিকিৎসায় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সবশেষে যদিও নকটারিয়া বয়স্ক মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, তারপরও যে কারো ঘুমে এটি বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে জীবনমানের উপরও।
তাই এ ধরণের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তারা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আলাপ-আলোচনা করে, দৈনন্দিন অভ্যাস থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অবস্থা, ওষুধ সেবনের মতো বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে তারপর সমাধান দিয়ে থাকেন।