প্রাচীন কাল থেকেই মিশরীয় ও ভারতীয়দের খাদ্যতালিকায় কাঠবাদাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বাদামে প্রচুর খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন রয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, প্রোটিন, এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভরপুর কাঠবাদাম ক্যানসারের বিভিন্ন প্রকার প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে।
১. ওজন কমানোর সহায়ক-
যদিও কাঠবাদামে উচ্চ ক্যালরি থাকে, এটি ওজন কমানোর জন্য উপকারী হতে পারে। এই বাদাম ফাইবার, প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিতে সমৃদ্ধ। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠবাদাম ক্ষুধা কমায় এবং দিনের শেষে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দূর করে, ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি শরীর থেকে বের হতে সাহায্য করে। তবে, এর উচ্চ ক্যালরি ব্যবহারের পরিমাণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
২. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি-
কাঠবাদামে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। এতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং উপকারী চর্বি মস্তিষ্ককে ফোকাস ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, কাঠবাদাম অনিদ্রা এবং মানসিক চাপ কমাতেও সহায়ক।
৩. ত্বক সুস্থ রাখে-
কাঠবাদামে ভিটামিন ই রয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ত্বককে দ্রুত বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। দিনে চারটি কাঠবাদাম খেলে শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা ত্বককে নরম এবং স্থিতিস্থাপক রাখে।
৪. হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়-
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচবার কাঠবাদাম খান, তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। কাঠবাদামে উপস্থিত ভিটামিন ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিনের মাত্রা কমাতে সহায়ক, যা ধমনীর ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত। কাঠবাদামে যথেষ্ট পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড এবং কিছু পরিমাণ পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি থাকে, যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
৫. হাড় শক্তিশালী করে-
কাঠবাদাম ক্যালসিয়ামের একটি উৎকৃষ্ট উৎস, যা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হাড়, দাঁত, ও মাংসপেশি শক্তিশালী করে। এছাড়া, কাঠবাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের কঙ্কালতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করে।
৬. দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে-
কাঠবাদামে ফসফরাস থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ করতে সহায়ক এবং চোখের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
৭. গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য ভালো রাখে-
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কিছু পরিমাণ কাঠবাদাম খাওয়া উচিত, কারণ এতে থাকা ভিটামিন ই অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কাঠবাদাম খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো সম্ভব। বিশেষ করে, যদি গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর হয়, তাহলে কাঠবাদাম খাওয়া একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
৮. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়-
মার্কিন জৈব রসায়নবিদ এডউইন ক্রেবসের মতে, কিছু বিশেষ ভিটামিন বি-এর অভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার সেলের সৃষ্টি হতে পারে। কাঠবাদামে প্রচুর ভিটামিন বি এবং ফ্ল্যাভনয়েড রয়েছে, যা নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এছাড়া, কাঠবাদামে থাকা বোরন প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
কাঠবাদাম খাওয়ার পদ্ধতি-
প্রতিদিন ১৪টি পর্যন্ত কাঠবাদাম খাওয়া যেতে পারে, তবে দৈনিক মাত্র চারটি কাঠবাদামও সমস্ত উপকারিতা প্রদান করতে সক্ষম। রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালিপেটে কাঠবাদাম খাওয়া যেতে পারে। কাঠবাদাম সালাদ, পায়েস, আইসক্রিম, কেক, পোলাও, এবং ফ্রায়েড রাইসে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই খাবারের মধ্যে বা স্মুদি, বিভিন্ন মিশ্র ফল, এবং মিল্কশেকেও এটি যোগ করা যেতে পারে। রান্নায় মাংসসহ কাঠবাদামের পেস্ট ব্যবহার করা সম্ভব। অফিসে একটি ছোট কৌটায় কাঠবাদাম রেখে দিন, কাজের মাঝে ক্ষুধা লাগলে চিবিয়ে খেতে পারেন।Healthx BD
আরও জানুন-