বন্ধ্যাত্ব একটি জটিল সমস্যা যা নারী ও পুরুষ উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণভাবে, যদি কোনো দম্পতি এক বছর ধরে কোনো প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক করার পরেও গর্ভধারণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই অবস্থাকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। এই সমস্যা শুধু নারীর নয়, পুরুষের কারণেও হতে পারে। তাই, বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
বন্ধ্যাত্বের কারণ:
বন্ধ্যাত্বের কারণ নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারে।
নারীর ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ:
- ডিমের সমস্যা: ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণে সমস্যা হলে গর্ভধারণে বাধা আসে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), প্রাথমিক ডিম্বাশয় ফেইলিউর (POF) এবং থাইরয়েড সমস্যা এই সমস্যার প্রধান কারণ।
- ফ্যালোপিয়ান টিউবের সমস্যা: ফ্যালোপিয়ান টিউব ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলনস্থল। এই টিউব বন্ধ থাকলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID), এন্ডোমেট্রিওসিস এবং পূর্বের কোনো সার্জারি এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
- জরায়ুর সমস্যা: জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি, ফাইব্রয়েড বা পলিপের কারণেও গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
- এন্ডোমেট্রিওসিস: জরায়ুর ভেতরের টিস্যু যখন জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে। এটি বন্ধ্যাত্বের একটি অন্যতম কারণ।
- বয়স: ৩৫ বছর বয়সের পর নারীদের ডিম্বাণুর গুণগত মান কমতে শুরু করে, যা গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ:
- শুক্রাণুর সংখ্যা কম: প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ১৫ মিলিয়নের কম শুক্রাণু থাকলে তাকে লো স্পার্ম কাউন্ট বলা হয়।
- শুক্রাণুর গতিশীলতা কম: শুক্রাণুর ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা কম থাকলে গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
- শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটি: স্বাভাবিক আকারের শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
- ভেরিকোসেল: অণ্ডকোষের শিরা ফুলে গেলে শুক্রাণুর উৎপাদন এবং গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- সংক্রমণ: কিছু সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামিডিয়া এবং গনোরিয়া পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করতে পারে।
- হরমোনের সমস্যা: টেস্টোস্টেরন বা অন্যান্য হরমোনের অভাবে শুক্রাণু উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে।
- জীবনযাত্রার কারণ: ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ওজন এবং কিছু ওষুধ সেবন পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ:
বন্ধ্যাত্বের প্রধান লক্ষণ হলো এক বছর ধরে চেষ্টা করার পরেও গর্ভধারণ করতে না পারা। এছাড়া কিছু পরোক্ষ লক্ষণও থাকতে পারে:
নারীর ক্ষেত্রে:
- অনিয়মিত মাসিক
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথা
- হরমোনের সমস্যা
পুরুষের ক্ষেত্রে:
- যৌন মিলনে সমস্যা
- অণ্ডকোষে ব্যথা বা ফোলা
- বীর্যের পরিমাণে অস্বাভাবিকতা

বন্ধ্যাত্বের নির্ণয়:
বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়েরই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়।
নারীর ক্ষেত্রে:
- শারীরিক পরীক্ষা: চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা নেন।
- রক্ত পরীক্ষা: হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
- ডিম্বাণু পরীক্ষা: ডিম্বাণু নিঃসরণ হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
- হিস্টেরোসালপিংগ্রাম: ফ্যালোপিয়ান টিউব খোলা আছে কিনা তা দেখার জন্য এই এক্স-রে পরীক্ষা করা হয়।
- আল্ট্রাসাউন্ড: জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের অবস্থা দেখার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়।
- ল্যাপারোস্কোপি: কিছু ক্ষেত্রে জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়ের সরাসরি পরীক্ষার জন্য ল্যাপারোস্কোপি করা হয়।
পুরুষের ক্ষেত্রে:
- শারীরিক পরীক্ষা: চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা নেন।
- বীর্য বিশ্লেষণ: শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং গঠন পরীক্ষা করার জন্য বীর্য বিশ্লেষণ করা হয়।
- রক্ত পরীক্ষা: হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
- অণ্ডকোষের আল্ট্রাসাউন্ড: অণ্ডকোষের কোনো সমস্যা থাকলে তা জানার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়।

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা:
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা কারণের উপর নির্ভর করে। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।
নারীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা:
- ওষুধ: ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করার জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
- ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন: এই পদ্ধতিতে শুক্রাণু সরাসরি জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।
- ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন: এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুকে শরীরের বাইরে নিষিক্ত করে জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।
- সার্জারি: ফ্যালোপিয়ান টিউবের সমস্যা, জরায়ুর সমস্যা বা এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে সার্জারি করা হতে পারে।
পুরুষের ক্ষেত্রে চিকিৎসা:
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ধূমপান, মদ্যপান ত্যাগ করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ওজন কমানো শুক্রাণুর গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
- ওষুধ: হরমোনের সমস্যা থাকলে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
- সার্জারি: ভেরিকোসেল বা অন্য কোনো গঠনগত ত্রুটি থাকলে সার্জারি করা হতে পারে।
- অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি: আইভিএফ বা ইন্ট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন (ICSI) এর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ICSI পদ্ধতিতে একটি শুক্রাণু সরাসরি ডিম্বাণুতে প্রবেশ করানো হয়।
উভয়ের চিকিৎসা কেন প্রয়োজন:
অনেক ক্ষেত্রে, বন্ধ্যাত্বের কারণ নারী বা পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকতে পারে। তাই, সফল চিকিৎসার জন্য উভয়েরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করানো জরুরি। শুধুমাত্র একজনের চিকিৎসা করলে সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে।
কিছু অতিরিক্ত তথ্য:
- বন্ধ্যাত্ব একটি সাধারণ সমস্যা এবং এর চিকিৎসা সম্ভব।
- সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে অনেক দম্পতিই সন্তানের মুখ দেখতে পান।
- মানসিক চাপ বন্ধ্যাত্বের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, মানসিক স্বাস্থ্যর যত্ন নেওয়াও জরুরি।
- বন্ধ্যাত্ব নিয়ে সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। সঠিক তথ্য জানা এবং কুসংস্কার থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।Healthx BD
আরও জানুন-
শীতে ত্বককে প্রাণ দিতে যা খাবেন


2 Comments
Stumbled upon Netwincasino while browsing. Interface is clean and easy to navigate. Has a modern slickness to it. I’d say give Netwincasino a shot!: netwincasino
Heard some good things about jilipg. Gonna check out their slots and see if they’re as good as everyone says. Always looking for a new favorite! jilipg