উচ্চ কোলেস্টরলের মত সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা খেয়ে থাকি তা শরীরে বিরূপ ভাবে প্রভাব ফেলে। শরীর কে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন কারণ এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমায়। প্রথমে কোলেস্টেরল সম্পর্কে জেনে নি।
“It is a scientific fact that your body will not absorb cholesterol if you take it from another person’s plate.”
Dave Barry
কোলেস্টেরল কী?
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। এটি কয়েক ধরনের হয়ে থাকে ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টরল। এর মধ্যে এইচডিএল হলো উপকারী। এটা শরীরে পেরিফেরি থেকে কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে লিভারে নিয়ে যায়। এরপরে এটি লিভারের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এটি বৃদ্ধি পেলে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আর বাকি তিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তিনটি কোলেস্টেরল কী ক্ষতি করতে পারে?
চিন্তিত এই কারণে, এই কোলেস্টেরল জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক যে রক্তস্রোত তা বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যেকোনো রক্তনালিকে আক্রান্ত করতে পারে, মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করতে পারে, লিম্বস আক্রান্ত করতে পারে, ব্লক করতে পারে।যদি হার্টে হয় তো হার্ট অ্যাটাক হলো, যদি লিম্বসে হয় তাহলে হাঁটতে অসুবিধা হবে। মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হতে পারে।
উপকারী কোলেস্টেরল যেটা বাড়ানো দরকার, সেটা কমে যায় কেন?
ওজন বাড়তে থাকলে, ডায়াবেটিস হলে এইচডিএল কমে যায়। খারাপ কোলেস্টেরলের কমানোর উপায় হল নিয়মিত হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাছ বেশি খাওয়া। তাহলে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল বাড়বে। অর্থাৎ যে কারণে অপকারী কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, সেই কারণেই উপকারী কোলেস্টেরল কমে যায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কী?
একটি হচ্ছে ওষুধ ছাড়া। এ ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে লাল মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস এগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। বেশি শাক-সবজি এবং মাছ বেশি করে খেতে হবে। আর নিয়মিত হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর খারাপ অভ্যাস যেমন ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।
ওজন ও রক্তে চর্বি যাঁদের বেশি অথবা হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের রোগীদের বেছে নিতে হবে এমন খাবার, যা রক্তে অসম্পৃক্ত বা উপকারী চর্বি সরবরাহ করে। পাশাপাশি সেগুলো যেন রক্তে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এ রকম কিছু খাবারের একটি তালিকা দিয়েছে।
১. ওটমিল বা ভুট্টার তৈরি খাবার: সকালের নাশতায় ভুট্টা বা যবের তৈরি ওটমিল বা কর্নফ্লেক্স হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এতে করে দিনের শুরুতেই ১ থেকে ২ গ্রাম আঁশ খাওয়া হয়ে যাবে, যা অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেবে।
২. বাদাম: প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম আপনার রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বা কম ঘনত্বের লিপিডের (এলডিএল) মাত্রা ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া বাদাম খেলে পাবেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শক্তি জোগাবে সারা দিন।
৩. শিমের বিচি: শিমের বিচি, মটরশুঁটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এমন খাদ্য সহজে পেট ভরার তৃপ্তি দেয়। ফলে কম খাওয়া হয়।
৪. তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ: সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অন্তত তৈলাক্ত মাছ খান। সামুদ্রিক মাছ হলে আরও ভালো। এতে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তে ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
৫. সবজি, ফলমূল: সবুজ পাতা ও ডাঁটাসুদ্ধ সবজি, যেমন বিভিন্ন ধরনের শাক এবং খোসাসহ ফলমূলে (যেমন: পেয়ারা, আপেল) রয়েছে অন্ত্রের চর্বি শোষণ কমানোর উপাদান। প্রতিদিন এ ধরনের খাবার আপনার রক্তে এলডিএলের মাত্রা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষণায় তথ্য মিলেছে।
কী খাবেন না:
রেড মিট, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেক, কুকিজ়, পেস্ট্রি, পনির, ঘি, মাখন, চিজ়, জ্যাম বাদ দিতে পারলেই ভাল। এতে শরীর থাকবে সুস্থ।
ক্রিমযুক্ত দুধ এবং তা থেকে তৈরি খাবার, ঘি-মাখন যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রতিদিনের ডায়েট:
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় যদি কোনও বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে ডায়েট চার্ট বানিয়ে নেওয়া যায়, কারণ প্রতিটি মানুষের খাদ্যতালিকা আলাদা হবে।
শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে না, আরও কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন।
ধূমপানের অভ্যেস অবিলম্বে ত্যাগ করতে হবে। কারণ ধূমপান কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি রোজ শারীরচর্চা করা উচিত। বাড়িতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ়, যোগব্যায়াম, হাঁটা ইত্যাদি আপনার কোলেস্টেরল কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
একজন ব্যক্তির রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম কোলেস্টেরলের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমায়। আর খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে ঘুমোতে যাবেন।
কোলেস্টেরল কমাতে ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে কী ওষুধ খাবেন এবং খাওয়াদাওয়া কেমন হবে, সবটাই মেনে চলতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো।