বায়ুদূষণের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে কীভাবে ফুসফুসের সমস্যা বা ক্যান্সার থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় তা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন। দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসই ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমসে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ সুষম ডায়েট ফুসফুস ভালো রাখতে অত্যন্ত সাহায্য করে। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কেবল সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেই উন্নত করে না বরং ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
প্রাণ ধারণের জন্য বাতাস চাই, আর প্রাণ ভরে বাতাস নিতে চাই সুস্থ ফুসফুস। ফুসফুস সুস্থ রাখতে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর কিছু অভ্যাস ত্যাগ করাও আবশ্যক—
১. ধূমপান ছেড়ে দিন: কেবল নিজের জন্যই নয়, ধূমপানের অভ্যাস অন্যের জন্যও ক্ষতিকর। পৃথিবীর বুকে কেন ছড়াবেন বিষাক্ত ধোঁয়া? সিগারেট ফুসফুসের ক্যানসার এবং দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগের জন্য দায়ী।
২. ঘরদোর রাখুন পরিষ্কার: ঘরে ধুলাবালু জমতে দেবেন না। বিশেষ করে কার্পেটজাতীয় সামগ্রী থাকলে চাই বাড়তি সচেতনতা। ধুলাময়লা, জীবাণু, এমনকি তেলাপোকার মলও কিন্তু আটকে থাকে কার্পেটে।
৩. তেলাপোকা দূর করুন: তেলাপোকার মল এবং দেহাবশেষ ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। প্রাকৃতিক উপায়ে তেলাপোকা দূর করার চেষ্টা করুন। কীটনাশক ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ।
৪. সরঞ্জামের খেয়াল রাখুন: রান্নাঘরে চিমনি বা এগজস্ট ফ্যান লাগানো ভালো। গ্যাসের চুলা, ওভেন প্রভৃতি যেসব সরঞ্জামই রান্নার কাজে লাগে, সেগুলো ব্যবহার করুন প্রস্তুতকারকের নিয়ম মেনে। কয়লা ও কেরোসিন থেকেও ক্ষতিকর পদার্থ সৃষ্টি হয়। মাটির চুলায় রান্না করলে এমনভাবে চিমনি স্থাপন করুন, যাতে ধোঁয়া ঘরের ভেতর না থাকে। ‘বন্ধু চুলা’ এমনই এক প্রযুক্তি।
৫. প্রাণ খুলে হাসুন: ‘রামগরুড়ের ছানা’ হয়ে জীবনটা পার করে কী হবে, বলুন? বরং হাসলে আপনার মন ভালো থাকবে, ভালো থাকবে ফুসফুসও।
৬. ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়ামে ফুসফুস ভালো থাকে। দৌড়ঝাঁপ, জগিং, খেলাধুলা—যা কিছুই আপনার দেহকে সচল রাখবে, তা-ই আপনার ফুসফুসের জন্য ভালো।
৭. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: হাতের মাধ্যমে করোনাভাইরাসসহ এমন অনেক জীবাণু ছড়ায়, যা ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম। তাই হাত পরিষ্কার রাখুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ করবেন না। দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করুন। নইলে মুখে জীবাণু জমতে থাকবে। আর সেখান থেকে শ্বাসনালিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এসব জীবাণু। অবিশুদ্ধ বাতাসের নানান ক্ষতি থেকে বাঁচতে মাস্ক এক কার্যকর সমাধান। বছরজুড়েই মাস্ক পরার সু-অভ্যাস ধরে রাখুন।
যেসব খাবার খেলে সুস্থ থাকা যায়:
১. কাজু, আখরোট, পেস্তা, চিনাবাদামসহ মিষ্টি কুমড়ার বীজ ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। সেই-সঙ্গে খনিজ লবণ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এসব খাবার ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে।
২. মধুতে অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল ও প্রদাহনাশক ক্ষমতা রয়েছে, যা ফুসফুস পরিষ্কার করে। তাই প্রতিদিন এক চা চামচ মধু খেলে তা হবে ফুসফুসের জন্য উপকারী।
৩. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধে বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এর মূল উৎস সূর্য। এ ছাড়া দুধ, ডিম, দই, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে।
৪. তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আর এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফুসফুস সুরক্ষায় খুবই কার্যকর। বাতাসে থাকা ধূলিকণা শোষণ করতে পারে তুলসী। তাই শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর করতে তুলসীপাতার রস কিংবা এই পাতা পানিতে ফুটিয়ে পান করুন। ফুসফুস ভালো থাকবে।
৫. ফুসফুস ভালো রাখতে কালোজিরা অনেক ভালো কাজ করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শ্বাসনালির প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকবে।
৬. ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করে এই ভিটামিন। শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালির জীবাণু ধ্বংস করে। লেবু, আমলকি, কমলা, আপেল, পেয়ারা ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
৭. রসুনে রয়েছে প্রচুর সেলিনিয়াম ও অ্যালিসিন। এ দুটি প্রাকৃতিক উপাদান ফুসফুস ও শ্বাসনালি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোধে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে।
৮. শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই। শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্যায়াম আপনার ফুসফুসকে ভালো রাখবে। এ জন্য এরোবিক্স, ইয়োগা বা কার্ডিও এক্সারসাইজ প্রতিদিন করতে হবে।
৯. গ্রিন টি বা সবুজ চায়ে ফ্ল্যাবিনয়েড নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফুসফুসের কার্য পরিচালনায় সহায়তা করে। সে সঙ্গে ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
১০. হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কারকিউমিন ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে সুরক্ষা করে। সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে কাঁচা হলুদের রস করে মাখন বা ঘির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ভালো কাজ হয়।
১১. সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখুন।