গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রায় সকলেই জীবনে কোনো না কোনো সময় এই সমস্যায় ভুগেছেন। রাতের বেলা এই সমস্যা আরও বেশি কষ্টদায়ক হতে পারে, যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং দৈনন্দিন জীবনেও প্রভাব ফেলে। কিছু সাধারণ অথচ কার্যকর রাতের অভ্যাস গড়ে তুলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে রাতের কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা যায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কি?
গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা বলতে পাকস্থলীর অ্যাসিডের অতিরিক্ত উৎপাদনকে বোঝায়। এই অতিরিক্ত অ্যাসিড খাদ্যনালী, পাকস্থলী এবং অন্ত্রের উপরের অংশে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে বুক জ্বালা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, অম্বল, এবং বদহজম এর মতো উপসর্গ দেখা যায়।
রাতের বেলা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কেন বাড়ে?
রাতে শোয়ার সময়, আমাদের পরিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। যার ফলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড বেশি সময় ধরে থাকে এবং খাদ্যনালীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও, রাতে অভিকর্ষের অভাবে অ্যাসিড সহজে খাদ্যনালীতে উঠে আসতে পারে।

রাতের যেসব অভ্যাসে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে :
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাতের অভ্যাসের তালিকা দেওয়া হলো যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে:
খাওয়ার সময়সূচী :
- রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে শেষ করুন।
- খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়বেন না।
- বেশি রাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
খাদ্যাভ্যাস :
- কম তেলে রান্না করা খাবার খান।
- সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন।
- রাতে বেশি মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার পরিহার করুন।
- কফি, চা ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
- টক ফল ও টক জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
- ধূমপান পরিহার করুন।
খাওয়ার পরিমাণ - রাতে অল্প পরিমাণে খাবার খান।
- পেট ভরে খাবার পরিহার করুন।
- রাতে নেমন্তন্ন থাকলে হালকা খাবার বেছে নিন।

- শোয়ার ভঙ্গি:
শোয়ার ভঙ্গি:- বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো ভালো।
- মাথার দিকটা সামান্য উঁচু করে ঘুমান।
- পেটের উপর ভর দিয়ে শোয়া পরিহার করুন।
অন্যান্য অভ্যাস : - খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হাঁটুন।
- রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম করুন।
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
- খাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট পর পানি পান করুন।
- খাওয়ার সময় বা পরে অল্প টক দই বা মৌরি খেতে পারেন।
কিছু ঘরোয়া প্রতিকার :
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও বেশ কার্যকর:
- আদা : আদা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের গ্যাস কমাতে সহায়ক।
- মৌরি: মৌরি খেলে পেটের গ্যাস, অম্বল এবং বদহজম কমে।
- জোয়ান: জোয়ান পেটের ব্যথা ও গ্যাস কমাতে উপকারী।
- পুদিনা: পুদিনা পাতা পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
- বেকিং সোডা : এক চিমটি বেকিং সোডা সামান্য পানিতে মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়। (তবে এটি নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত নয়।)
- লেবুর রস: হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে, বা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- ঘন ঘন বুক জ্বালা।
- পেটে তীব্র ব্যথা।
- বমি বা মলের সাথে রক্ত।
- ওজন কমে যাওয়া।
- খাবার গিলতে অসুবিধা।
কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে রাতের বেলার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সময়সূচী, শোয়ার ভঙ্গি, এবং কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। তবে, যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।Healthx BD
আরও জানুন –
প্রায়ই হাত-পায়ে ব্যথা হচ্ছে, কীভাবে বুঝবেন বড় কোনো রোগের লক্ষণ