গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে তেমন বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় একটু বেশি খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভকালীন বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভকালীন সময়ে খাবার তালিকা যেমন হওয়া দরকার?
গর্ভকালীন সময়ে খাবার তালিকায় একই ধরনের খাবার রাখা ঠিক না। প্রতিদিনই পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে। এতে করে সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে। পাশাপাশি কোনো খাবারের প্রতি একঘেয়েমিও আসবে না। গর্ভাবস্থায় যে সব খাবার খেলে রুচি আসে সে সব খাবার খেতে হবে কিন্তু খুব বেশি পরিমানে খাওয়া যাবেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে খাবারে অরুচি হতে পারে । Healthxbd বমি বমি লাগে কিংবা বুক জ্বালাপোড়া করে। খেতে ইচ্ছা করে না। তাই তিনবেলা খুব বেশি না খেয়ে দিনে অল্প অল্প করে খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় শুধু পুষ্টিকর খাবার দিয়েই আপনার পুষ্টির সুবটুকু চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না-ও হতে পারে। গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সেবন করা প্রয়োজন।
আরো জানুন-
- শীতের ৪ চা, কমবে জমে থাকা কফ||সর্দি-কাশির সমস্যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সাধারণ
- শীতে ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখবেন কিভাবে
- একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম।
- শীতকালে হাঁপানি রোগীরা ভালো থাকবেন যেভাবে
গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কতটুকু খাবার খেতে হবে?
গর্ভাবস্থায় খাওয়া দাওয়া অনেক বাড়িয়ে দিতে হবে এমন নয়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না।কিন্তু এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় কতটুকু খাবার খেতে হবে সেটি খাবারে থাকা ক্যালরির সাহায্যে হিসাব করা যায়। গর্ভাবস্থায় বাড়তি খাবারের বা ক্যালরির চাহিদা একই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে পূরণ না করে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে মেটানো উচিত। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্য থাকলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে।
১ থেকে ৩ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা
এসময়ে খাবার তালিকা ক্যালরির চাহিদা আপনার উচ্চতা, ওজন ও দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণসহ বেশ কিছু জিনিসের ওপরে নির্ভর করবে। ওজন বাড়তে থাকলে সেই অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এবং ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনে আসার চেষ্টা করতে পারেন।
আবার ওজন কমতে থাকলে ব্যায়াম স্বাভাবিক রেখে খাবারের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। এসব বিষয়ে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার জন্য বিশেষভাবে খাবার তালিকা প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারবেন।
গর্ভবতী নারীর সারাদিনের খাবার তালিকার নমুনা তুলে ধরা হয়েছে। এই তালিকাটি ১৮০০ ক্যালরির। Healthxbdউচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, গর্ভধারণের আগের ওজন ৫৫ কেজি ও সপ্তাহে ২–৩ দিন হালকা ব্যায়াম করেন এমন নারীর জন্য এই তালিকাটি প্রযোজ্য।
খাবারের ধরন | পরিমাণ |
ভাত (লাল চাল) | ২.৫–৩ কাপ (৫০০–৬০০ গ্রাম) |
সবুজ ও রঙিন শাক | ১–১.৫ বাটি (২৫০–৩৭৫ গ্রাম) |
কমলা ফল ও সবজি | ১ বাটি (২৫০ গ্রাম) |
ডিম | ১টি |
দুধ | ১ গ্লাস (২৫০ গ্রাম) |
মাছ অথবা মাংস | ১ টুকরা (৫০ গ্রাম) |
ঘন ডাল | ২ বাটি (৫০০ গ্রাম) |
এই খাবারগুলো রান্না করার সময়ে অল্প পরিমাণে তেল ব্যবহার করা হয়েছে। রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে খাবারের পুষ্টিগুণ না বাড়ালেও ক্যালরির পরিমাণ খানিকটা বাড়িয়ে দেয়।Healthxbd
আরো জানুন-
- শীতের ৪ চা, কমবে জমে থাকা কফ||সর্দি-কাশির সমস্যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সাধারণ
- শীতে ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখবেন কিভাবে
- একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম।
- শীতকালে হাঁপানি রোগীরা ভালো থাকবেন যেভাবে
৪ থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা
গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে গর্ভবতী মায়ের খাবারের চাহিদাও বেড়ে যায় । তাই গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর থেকে খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হয়। একজন স্বাভাবিক ওজনের ৪ থেকে ৬ মাসের গর্ভবতীর প্রথম তিন মাসের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৪০ ক্যালরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। অপরদিকে একজন স্বাভাবিক ওজনের ৭ থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে। আপনার ওজন বেশি হলে আরেকটু কম পরিমাণে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। এই বিষয়ে আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নিন।অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন তিন বেলার খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও দুই বার হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে । গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত তেল-চর্বি খাওয়া ঠিক নয়। যেমন: ভাজাপোড়া, পরোটা, মিষ্টি ও কেক-পেস্ট্রি। এসব খাবার বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সবমিলিয়ে মা ও গর্ভের শিশুর নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে—
- মাখন
- ঘি-ডালডা
- ক্রিম
- চকলেট
- ভাজাপোড়া
- চিপস
- বিস্কুট
- কেক
- পেস্ট্রি
- আইসক্রিম
- পুডিং
- কোমল পানীয়।
গর্ভকালীন সময়ে এই ধরনের খাবার যতটুকু না খেলেই নয়, ঠিক ততটুকুই খাবেন। এই সব খাবারের পরিবর্তে ফাইবার সমৃদ্ধ শর্করা খাবার লাল আটার রুটি ও লাল চালের ভাত বেছে নিতে পারেন। Healthxbdসেই সাথে খাবারের তালিকায় কিছু পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখবেন। যেমন: অলিভ অয়েল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও ইলিশ, পুঁটি ও চাপিলার মতো তৈলাক্ত মাছ।
গর্ভকালীন সময়ে আরও কিছু কিছু খাবার খাওয়া পুরোপুরিভাবে বাদ দিতে হবে। এসব খাবার খেলে আপনার গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। যেমন—
- গরু, ছাগল ও ভেড়ার দুধ
- কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরি সব ধরনের খাবার
- ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম
- অর্ধসিদ্ধ সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি খাবার। যেমন: সুশি
- ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া ফ্রোজেন বা প্রক্রিয়াজাত মাংস। যেমন: সসেজ, সালামি ও পেপারনি
- ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়। যেমন: চা-কফি, এনার্জি ড্রিংক ও ক্যাফেইনযুক্ত কোমল পানীয়
- মদ বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়
- অ্যালার্জি জাতীয় খাবার। যেমন: চিনাবাদাম
- হারবাল বা ভেষজ ঔষধ
গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন ছয় ধরনের খাবার খেতে হবে।এই খাবার হলো—
- শর্করা জাতীয় খাবার। যেমন: ভাত ও রুটি
- গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাক
- রঙিন ফল ও সবজি
- ডিম
- দুধ জাতীয় খাবার
- মাছ, মাংস ও ডাল
এসব খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাবেন। যেমন: আমলকি, আমড়া, জাম, জলপাই, লেবু, জাম্বুরা, কমলা ও মাল্টা। ভিটামিন সি আপনার ও গর্ভের শিশুর ত্বক, রক্তনালী ও হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া শরীরকে আয়রন শোষণেও সহায়তা করবে।Healthxbd
শর্করা জাতীয় খাবার
আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস হলো শর্করা। শর্করা জাতীয় খাবারে ভিটামিন পাওয়া যায়। গর্ভকালীন সময়ে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা মেটাতে খাবার তালিকায় শর্করা থাকা অপরিহার্য। শর্করা জাতীয় খাবার হলো—
- ভাত
- রুটি
- আলু
- সিরিয়াল বা কর্ন ফ্লেকস
- নুডলস ও পাস্তা
- ভুট্টা
- ওটস
তবে প্রক্রিয়াজাত শর্করা যেমন: সাদা চাল ও আটা খাওয়ার চেয়ে গোটা শস্য দানা ও খোসাসহ আলু খাওয়া ভালো। এতে করে খাবারের পুষ্টিমান ও আঁশের পরিমাণ অটুট থাকে।
আরো জানুন-
- শীতের ৪ চা, কমবে জমে থাকা কফ||সর্দি-কাশির সমস্যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সাধারণ
- শীতে ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখবেন কিভাবে
- একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম।
- শীতকালে হাঁপানি রোগীরা ভালো থাকবেন যেভাবে
ফল ও শাকসবজি
গর্ভাবস্থায় দিনে কমপক্ষে রঙিন ফল ও নানান ধরনের শাকসবজি খেতে হবে। এসব ফল ও শাকসবজি গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটায়। রঙিন ফল ও সবজিতে ক্যারোটিন থাকে। Healthxbdযা গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে। শাকসবজি ও ফল কাঁচা কিংবা রান্না, টাটকা অথবা ফ্রোজেন—যেকোনো উপায়েই খাওয়া যেতে পারে। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন।
শাকসবজি ও ফল যেমন—
শাকসবজি | ফল |
গাজর | আম |
মিষ্টি আলু | কলা |
মিষ্টি কুমড়া | কমলা |
পালং শাক | মাল্টা |
টমেটো | জাম্বুরা |
মটরশুঁটি | বাঙ্গি |
ক্যাপসিকাম | পেয়ারা |
আপনার শিশুর শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য আপনাকে অবশ্যই গর্ভকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
এমন কিছু প্রোটিন জাতীয় খাবার হলো—
- মাছ
- মাংস
- ডিম
- দুধ
- ডাল
- মটর, শিম ও মটরশুঁটি
- বাদাম
তবে এসব খাবার খাওয়ার আগে খাবার ঠিকমতো সিদ্ধ হয়েছে কি না অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কেননা কম সিদ্ধ হলে খাবারের সাথে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা পরবর্তীতে আপনার ও আপনার শিশুর শরীরে ইনফেকশন থেকে শুরু করে গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে।Healthxbd