আমলকী, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং ঔষধি গুণে পূর্ণ, একটি পরিচিত দেশীয় ফল। এটি দামি না হওয়া সত্ত্বেও সহজলভ্য এবং বিভিন্ন উপকারিতার অধিকারী। আমলকীর গাছের পাতা ও ফল উভয়ই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর।
- সর্দি-কাশি ও জ্বর কমাবে –
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে অনেকেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, এবং কাশির সমস্যায় ভুগছেন।বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলেও এসব উপসর্গ কমছে না। দ্রুত সুস্থ হতে, ওষুধের পাশাপাশি আমলকী খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, আমলকীতে পেয়ারার চেয়ে তিন গুণ এবং কাগজি লেবুর চেয়ে দশ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া, আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।তাই নিয়মিত আমলকী খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- স্কার্ভি দূর করবে-স্কার্ভি একটি পরিচিত দাঁতের মাড়ির রোগ, যা সাধারণত শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাবে হয়। স্কার্ভির কারণে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়িতে ঘা হওয়া, শরীরের দুর্বলতা, চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, মুখের ফ্যাকাসে হওয়া এবং হাড়ের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। প্রতিদিন মাত্র ১-২টি আমলকী খেলে এসব সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- আলসার চিকিৎসায়-গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের নাম শুনেননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। সাধারণভাবে যেটা গ্যাস্ট্রিক বা আলসার হিসেবে পরিচিত, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে পেপটিক আলসার বলা হয়। নিয়মিত আমলকী খেলে পেটের এই আলসার কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস চিকিৎসায়-আমলকীতে সলিউবল ফাইবার থাকে, যা শরীর থেকে টক্সিন অপসারণে সহায়তা করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- ক্ষুধামন্দা দূর করে-প্রতিবার খাওয়ার আগে মাখন ও মধুর সঙ্গে আমলকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে-আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন – এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে কার্যকর। এছাড়া, এটি চোখের লালভাব, চুলকানি ও চোখ দিয়ে পানি পড়া প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকীর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- গলা ব্যথা ও ঠান্ডা দূর করে-আমলকীর গুঁড়োর সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার গ্রহণ করলে তা গলা ব্যথা এবং ঠাণ্ডা কমাতে সহায়তা করে। দীর্ঘমেয়াদি কাশি এবং সর্দির জন্য আমলকীর নির্যাস বেশ উপকারী।
- হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে-উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। আমলকী খেলে এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ধমনির ব্লক পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। নিয়মিত আমলকী খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তের সুগার কমায়-আমলকীতে পলিফেনল থাকে, যা রক্তে অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীরকে সুরক্ষিত করে। এটি শরীরের ইনসুলিন শোষণে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
- দেহের চর্বি কমায়-ওজন কমাতে আমলকী উপকারী হতে পারে। নিয়মিত আমলকী খেলে শরীরের প্রোটিনের স্তর বাড়ায়, যা দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এটি হজমশক্তিও উন্নত করে, ফলে মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন আমলকী খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- হাড় মজবুত করে-আমলকীতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরিষ্কার করে-রক্ত পরিষ্কার করতে আমলকী খুবই কার্যকর। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে টক্সিন অপসারণে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকী খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- চুলের যত্নে ও খুশকির সমস্যা দূর করে-আমলকী চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের যত্নের জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান।এটি খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে। আমলকী চুলকে খুশকিমুক্ত রাখে এবং কম বয়সে চুল পাকানো রোধ করে। প্রতিদিন সকালে মধুর সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে খেলে চর্মরোগ নিরাময় হয়। এছাড়াও, এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং মুখের চামড়ায় দাগ পড়তে দেয় না।Healthx BD
–কখন লেবু পানি খেলে পেতে পারেন উপকার