ডায়াবিটিস! এই অসুখটা কম বেশি প্রতিটি ঘরেই দেখা যায়। এই অসুখটি বিভিন্ন রোগকে ডেকে আনে এবং এখনও পর্যন্ত এই অসুখের কোন ওষুধ আবিষ্কার করা যায় নি। ডায়াবেটিস রোগটির জন্য বহু খাবার খাওয়া যায় না। কিন্তু কিছু ফল আছে যা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
এ বছরের মতো জামের মৌসুম শেষ। গ্রীষ্মের শেষের দিকে খুব কম সময়ের জন্য জামের ফলন হয়। দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে হওয়ায় এই ফল কিনে খেতে পারেন সবাই। সাধারণত জাম খাওয়ার পর বীজগুলো ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই দৃশ্য দেখলে হয়তো অবাক হবেন যে কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তে ফল বিক্রেতারা ভালো জাম থেকে বীজ আলাদা করে নিচ্ছেন সেগুলো কেজি দরে বিক্রি করার জন্য।
অনেকেই মনে করেন, জামের বীজ রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে জাম খাওয়ার পর জামের বীজগুলো ফেলে না দিয়ে সেগুলো গুঁড়া করে খেয়ে ফেলেন। কিন্তু সত্যিই কি এর কোনো স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে? আর কতটুকুই-বা খেতে হবে?
এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় একটি হাইপারগ্লাইসেমিক; অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খুব বেশি, এমন একটি ইঁদুরের শরীরে জামের বীজ প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষায় জামের বীজ ইঁদুরটির রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে এনে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
খাবারের স্টার্চকে ভেঙে দেয়
ডায়াবিটিসে জাম বিশেষ উপকারী। জামের মধ্যে থাকা একটি বিশেষ উপাদান খাবারের স্টার্চকে ভেঙে দেয়। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে। সুগার রোগীদের ঘনঘন প্রস্রাব ও তৃষ্ণার প্রবণতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। কালোজামের বীজে থাকে জাম্বোলিন৷ যা স্টার্চ সুগারে পরিণত করতে সাহায্য করে৷ ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কালোজাম৷ রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে তাই ডায়াবেটিকদের প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা৷ শুধু তাই নয়৷ ছোটবেলা থেকেই যদি নিয়মিত কালোজাম খাওয়া হয় তাহলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে৷
রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে
ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ খুবই উপকারী। ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জাম খাওয়া উপকারী। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
জামে থাকা পলিফেনল উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। নির্দিদ্ধায় একজন সুগার রুগী এই ফলটি খেতে পারেন। কালোজাম সুগার রুগীর রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। মূলত কালোজামের বীজকে গুঁড়ো করে দিনে একবার যদি হাফ চামচ খাওয়া যায় সেটি এই রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর।
এই বীজের গুণেই কমে ওজন
ওজন বেশি থাকাটা কোনো কাজের কথা নয়। এক্ষেত্রে ওবেসিটির কারণে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরলসহ একাধিক জটিল অসুখ পিছু নিতে পারে। তাই সাবধান হয়ে ওজন কমাতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জামের বীজ খেলেই মেদ ঝরে যায়। তাই ওজন বেশি থাকলে জামের বীজের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
পেটের জন্য উপকারী
বাঙালি আর পেটের সমস্যা যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। বদহজম, গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মতো জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে একের পর এক অ্যান্টাসিড গিলে ফেলতে আমাদের কোনো জুড়ি নেই।
তবে এই ধরনের ওষুধ নিয়মিত খেলে কিডনি, লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঘরোয়া টোটকার সাহায্যেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে নেয়া দরকার। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে জামের বীজ। এই বীজ নিয়মিত খেলে পেটের অসুখ থেকে সহজে নিস্তার পাওয়া যায়।
ইমিউনিটি চাঙ্গা থাকে
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করলে ভয়ংকর সংক্রামক অসুখ থেকে মুক্তি মেলা সম্ভব। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাসের মতো জীবাণু দেহে দাঁত ফোঁটাতে পারে না।
তাই যেভাবেই হোক ইমিউনিটি বাড়াতেই হবে। আর আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের কথায়, নিয়মিত জামের বীজ খেলেই ইমিউনিটি বাড়ানো সম্ভব। তাই প্রতিদিন সকালে জামের বীজের গুঁড়া মেশানো পানিপান করতে ভুলবেন না যেন!
কিভাবে জামের বীজ ব্যবহার করবেন?
জাম পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রাখুন। ফল থেকে বীজ ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য একটি কাচের জারে রেখে দিন। বীজগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে গায়ে শাঁস না লেগে থাকে। পরিষ্কার কাপড়ে বীজগুলো ছড়িয়ে ৩ থেকে ৪ দিন রোদে শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে বাইরের খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের সবুজ অংশ বার করুন। সবুজ অংশটি সহজেই আঙুলের চাপে ভাঙতে পারবেন। সবগুলি ভেঙে আরও কিছুদিন রোদ্রে শুকোতে দিন। এবার শুকনো বীজগুলো মিক্সিতে ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। ভালো করে গুঁড়ো করার পর চালুনিতে চেলে নিন। তারপর জামের বীজের গুঁড়ো একটি বায়ু-নিরোধক কাচের জারে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন। এক গ্লাস জলে এক চা-চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।