প্রায় ৯০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ফোন নিয়ে যান টয়লেটে, এমনটিই জানাচ্ছে গবেষণা। সংখ্যাটি কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বর্তমান পরিস্থিতি।
এই বদভ্যাস কিন্তু শরীরের জন্য হতে পারে মারাত্মক। টয়লেট হলো জীবাণুর আঁতুরঘর। ই কোলি, সি ডিফিসিলের মতো মারাত্মক ধরনের জীবাণু থাকে টয়লেটে।
বর্তমানে মোবাইল ফোন ছাড়া দিন যাপনের কথা চিন্তাও করতে পারেন না অনেকে। অবশ্য বিভিন্ন প্রয়োজনে মোবাইল ফোন দরকার হয়ই। মোবাইলফোনের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারও আছে। এসব জানার পরও একটু সময় পেলে কারণে–অকারণে মোবাইলফোনের পর্দায় আমরা চোখ রাখি। টয়লেটে সময় কাটানোর জন্য অনেকে মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে যান। আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ মনে হলেও এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে মারাত্মক সব সমস্যা।
২০২৩ সালে লিথুয়ানিয়াভিত্তিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান নর্ডভিপিএনের এক জরিপে জানা যায়, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় এখন প্রতি ১০ জনের ৬ জনই টয়লেটে ফোন নিয়ে যান। তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা আরও বেশি। এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৯৩ শতাংশ তরুণেরই এই বদভ্যাস আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বদভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমাদের টয়লেটের দরজার লক, ফ্লাশ, কমোড, পানি ট্যাপ ইত্যাদিতে জমে থাকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া। টয়লেট যেহেতু বেশিরভাগ সময় ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে থাকে তাই এই পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া আরও দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ধরনের পরিবেশে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আমাদের শরীরে কোনোভাবে প্রবেশ করলে রোগ বিস্তারে সময় লাগে না।
আরো জানুনঃ
- একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম।
- শীতের ৪ চা, কমবে জমে থাকা কফ||সর্দি-কাশির সমস্যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সাধারণ
- ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ড: কখনো হারাবে না রোগীর ফাইল ও রিপোর্ট
আসুন জেনে নেই, টয়লেটে মোবাইলফোন ব্যবহারে আমাদের শরীরের ৬টি স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা…
মেরুদণ্ড ও কাঁধের ব্যথা
টয়লেটের কমোডে বসে আমরা অনেকেই মোবাইলফোন ব্যবহার করে থাকি। মোবাইলফোন ব্যবহারের সময় আমরা মূলত দুই হাঁটুর ওপর কনুই ভর যাতে থাকি। এ ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতি হয় যখন আমরা উপুড় হয়ে কোনো ভিডিও দেখতে থাকি। যতক্ষণ না ভিডিও শেষ হয়, ততক্ষণ কমোডে বসে থাকি একই ভঙ্গিতে। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হাসিল হলেও ভিডিও শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেভাবেই বসে থাকি সবাই। এতে মেরুদণ্ড ও পার্শ্ববর্তী পেশিগুলোয় চাপ পড়ে এবং ধীরে ধীরে অস্বস্তি শুরু হয়। পিঠে ও কাঁধে ব্যথা হয়। প্রথম প্রথম সমস্যাটি অতটা প্রকট না হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
মলদ্বারে পাইলসের সমস্যা
টয়লেটে মোবাইলফোন ব্যবহারের কারণে একই জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে আমাদের মলদ্বারের শিরার ওপর চাপ পড়ে। এতে দেখা দিতে পারে পাইলসের মতো সমস্যা। পাইলসকে চিকিৎসকেরা বলেন হেমোরয়েড। বাংলায় বলা হয় অর্শ। পাইলস ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নিচে নেমে আসে। পায়ুপথকে ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করলে ৩টা, ৭টা ও ১১টার কাঁটার জায়গায় তিনটি রক্তের শিরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে চাপ খেয়ে ফুলে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। পাইলসের সমস্যা বেশি হলে পায়ুপথে রক্ত প্রবাহিত হয়।
পায়ে ঝিঁঝিঁ লাগা
টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে মোবাইলফোন ব্যবহার করলে বেশির ভাগ সময় পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে যায়। আমরা মোবাইলফোনে মধ্যে মনোযোগ বেশি দেই বলে সময়ের হিসাব থাকে না। আর এদিকে দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে হাঁটুর ওপর কনুই ভর দিয়ে বসে থাকার কারণে পায়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। আর সে কারণেই পায়ে ঝিঁঝিঁ লাগে এবং পরে উঠে দাঁড়ানোই দায় হয়ে পড়ে। এটাও স্বাস্থের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
অনলাইনে যে কোন সময় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে ভিজিট করুন HEALTHx এর ওয়েবসাইটে
জীবাণুর সংক্রমণ
আমার আপনার বাথরুমের কোনও জায়গা পরিষ্কার নয়। এখানে রাজ্যের সব ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু থাকে। বাথরুমে ই কোলি, সি ডিফিসিলের মতো জীবাণু রয়েছে। সেই জীবাণু কিন্তু আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ফোনের মাধ্যমে। টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে মোবাইলফোনে আরও জীবাণু বাসা বাঁধার সুযোগ পায়। মোবাইলফোনে বুঁদ হয়ে যত বেশি সময় টয়লেটে থাকবেন, জীবাণু আপনাকে ততই পেয়ে বসবে। তাই টয়েলেটে ফোন ব্যবহার করার কথা ভাববেনও না। শুধু আপনি নন, গোটা পরিবার এতে বিপদে পড়তে পারে। এমনিতেও মোবাইলফোনে থাকে অগুনতি জীবাণু। এ কারণে জীবাণুর হাত রক্ষা পেতে নিয়মিত মোবাইলফোন স্যানিটাইজ করা জরুরি।
আরো জানুনঃ
- সুস্থ থাকা কেন জরুরি?
- ফুড পয়জনিং: কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
- শীতে আলস্য ঝেড়ে ফেলবেন যেভাবে
চোখের সমস্যা ও চোখে ঝাপসা দেখা
দীর্ঘ সময় ধরেমোবাইলফোনের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, মোবাইলফোনের পর্দা থেকে আসা নীল আলো আমাদের চোখ ও মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্বাভাবিকভাবে টয়লেটে গিয়ে মোবাইলফোন ব্যবহার করার কথা নয়। আর তা মানলে এ সময় চোখ দুটো কিছুটা বিশ্রাম পায়। কিন্তু টয়লেটে গিয়েও আমরা মোবাইলফোন ব্যবহার করে থাকি ফলে চোখ আর সেই বিশ্রামটুকু পায় না। এ কারণে দেখবেন, টয়লেট থেকে বের হলে সব ঝাপসা লাগে। এ ছাড়া টয়লেটে সাধারণত আলো থাকে অল্প। এমন আলোতে মোবাইলফোন ব্যবহার চোখের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা
আমরা অনেকেই রাতে ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যাই। আর টয়লেটে আমাদের সঙ্গী হয় মোবাইলফোন। হ্যাঁ, টয়লেট সারতে কারও কারও একটু বেশি সময় লাগতেই পারে। তাই বলে সময় কাটানোর জন্য ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলফোনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। এতে মোবাইলফোনের পর্দার আলো আমাদের চোখ থেকে ঘুম কেড়ে নেয়। আর মাঝরাতে একবার ঘুম ছুটে গেলে আবার ঘুমাইতে বেশ সময় লাগে। ঘুমের এ ব্যাঘাত স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।