হৃদরোগ একটি জটিল রোগ। শিশুদের জন্মগত ত্রুটি ছাড়া সাধারণত হৃদরোগের সমস্যা হয় না। এই কারণে অনেক বাবা-মাই সন্তানের বুকের ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কখনো কখনো এটি আপনার শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জন্মগত হলেও জন্মের পর সাথে সাথে জন্মগত হৃদরোগের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও সাধারণ জন্মগত হৃদরোগ। যেমন-হোল ইন হার্ট বা হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র হয়ে থাকে তবে জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহে এটি শনাক্ত করা যায় না।
সাধারণ হৃদরোগ যেমন ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট এবং পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস । প্রথম ১-৪ সপ্তাহে এই রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। মুলত এটি ফুসফুসের চাপ এবং রক্তপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার কারণে ঘটে থাকে। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ত্রুটি ও পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস (ভিএসডি এবং পিডিএ) ধীরে ধীরে ফুসফুসের চাপ ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং হার্টের আকারও বাড়িয়ে দেয়।
হৃৎপিণ্ডে একটি বড় ছিদ্র হলে ফুসফুস এবং শরীরের মধ্যে রক্ত প্রবাহের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে এবং বর্ধিত শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রচেষ্টার জন্য হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শরীরের বৃদ্ধি ধীর হয়, দুর্বল বা ওজন বৃদ্ধি পায় না। জন্মের ৪-৬ সপ্তাহ পরে লক্ষণগুলো শুরু হয়।
নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই হৃদরোগের ব্যপারে শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। যেমন-
১) দুধ খাওয়ার সমস্যা: শিশু যদি কিছু সময় দুধ খেয়ে হাপিয়ে যায় এবং দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, তারপর আবার খাওয়া শুরু করে অথবা দুধ খেতে বেশি সময় নেয় কিংবা খাওয়ার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং ঘাম হয়।
২) ওজন বৃদ্ধি সন্তোষজনক না হলে: শিশুর ওজন বৃদ্ধির হার বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ না হলে।
৩) ঘনঘন ঠান্ডা লাগা বা কাশি হওয়া: শিশুর বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাহলে আংশকা থাকে তার হার্টের ত্রুটি আছে।
৪) জ্বর বা কাশি ছাড়া, ক্রমাগত দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (এমনকি ঘুমের সময়) এবং বুকের পাজর বা খাঁচা দেবে যাওয়া।
৫) শিশুর হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত চলে ।
৬) শিশুর ঠোঁট, জিহ্বা এবং নখ নীলাভ হবে বা কান্নার সময় নীল হয়ে যায়। জন্মগত হৃদরোগের কারণে ত্বক, নখ, জিহ্বা এবং ঠোঁটের রঙ পরিবর্তন হতে পারে। এটি ঘটে যখন ভালো বা অক্সিজেন সমৃদ্ধ লাল রক্ত অক্সিজেন ক্ষয়প্রাপ্ত নীল রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং শরীরে সঞ্চালিত হয় যা ত্বক, নখ, জিহ্বা এবং ঠোঁটে সর্বদা বা কমপক্ষে যখন সে কাঁদে তখন স্পষ্ট হয়।
এটি একটি গুরুতর জন্মগত হৃদরোগ, যার জন্য প্রাথমিকভাবে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়। উপরের কয়েকটি লক্ষণ বা সমস্যা পরিলক্ষিত হলে ডাক্তারের পরামর্শে জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহে হার্ট সার্জারি করাতে হবে।
হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর যত্ন-
১)পরিচর্যাকারীকে অবশ্যই কঠোরভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
২) বয়স্ক শিশুদের দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই শেখানো উচিত।
৩) খাদ্যতালিকা, চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে।
৪) এ ধরনের শিশুদের জন্য ব্যায়াম সীমিত ও কাস্টমাইজ করা আবশ্যক, কিন্তু বন্ধ করা উচিত নয়।
৫) সুরক্ষার জন্য টিকাদান সময়মতো সম্পন্ন করতে হবে। অতিরিক্ত অত্যাবশ্যক টিকা যেমন- নিউমোকোক্কাল ভ্যাকসিন, মেনিনোকোক্কাল ভ্যাকসিন এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিতে হবে।
৬) সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে যাদের জ্বর, কাশি, সর্দি, হাম, চিকেনপক্স এবং ডায়রিয়া আছে।
৭) যদি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর হয় বা নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্রোপচার করাতে হলে বা যাদের করা হয়েছে, তাদের অবশ্যই পরামর্শমতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রফিল্যাক্সিস দিতে হবে।Healthx BD
৮) জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে বেশি। বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ যেমন, নিউমোনিয়া হওয়ার আশংকা বেশি দেখা যায়।
–মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে আর ভয় নয়