মো: আমানুল্লাহ পেশায় একজন প্রকৌশলী।
এক সময় প্রতিদিন তার ১০টি সিগারেট লাগতো ধূমপানের জন্য।
বছর তিনেক হলো মি: আমানুল্লাহ ধূমপান ছেড়েছেন।
কিভাবে ধূমপান ছাড়লেন তিনি?
মি: আমানুল্লাহ বলেন, “কোন উপায় নেই। একদিন হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলাম সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেব। এটা জাস্ট একটা ডিসিশন। অন্য কিছু না।”
ধূমপান ছেড়ে দেবার পর প্রথম তিন-চার মাস সেটি ধরে রাখতে বেশ কষ্ট হয়েছে তাঁর। এরপর থেকে আর কখনও ধূমপান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না মি: আমানুল্লাহ।
যারা একবার কৌতূহল বশত একটি সিগারেট পান করেছে তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুরাদস্তুর ধূমপায়ী হয়ে গেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে
তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ধূমপানের বিষয়টি সবচেয়ে সামনে আসে।
আজ, এখনই:
সবার আগে মনস্থির করুন। আমার এক কলিগ নাকি এক রাতের সিদ্ধান্তেই ১৭ বছরের অভ্যাস ধূমপান ছেড়েছেন। কীভাবে? জানতে চাইলে বললেন, ‘করোনা থেকে সেরে ওঠার পর থেকে পেটে ব্যথা করত। ডাক্তার বলেছিল, ফুসফুসের অবস্থা বিশেষ ভালো না। প্রথম দুই দিন ধূমপান ছেড়ে দেখলাম, ভালোই তো, প্রতিদিন দিব্যি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেঁচে যাচ্ছে। তাই আর ইচ্ছাও করেনি। এখন পেটে ব্যথা, হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটির সমস্যা—এগুলো কিছুই নেই।’
ধূমপান ছাড়ার মনস্থির করে ফেললেই মনে করুন ৫০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। ‘কাল করব বা পরে করব অথবা বিশেষ দিন থেকে শুরু করব’—এমন অজুহাত দেখাবেন না। বরং এই মুহূর্তেই পকেটে থাকা সিগারেটের প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে দিন। এটা আপনাকে মানসিকভাবে এগিয়ে দেবে অনেকখানি।
জামাকাপড় পরিষ্কার করে ফেলুন:
মনে রাখতে হবে, আপনি একটা যুদ্ধে আছেন। এখানে আপনি দুর্বল হতে পারেন, এমন কোনোকিছুই রাখা যাবে না। কাজেই, কাপড়চোপড়ে লেগে থাকা সিগারেটের গন্ধ যাতে আপনাকে দুর্বল করে ফেলতে না পারে, সে জন্য কাপড়চোপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। অ্যাশ ট্রে ফেলে দিন। যেসব বন্ধুরা ধূমপান করে, সাময়িকভাবে তাঁদের সঙ্গ ছাড়ুন। যেসব জায়গায় সবাই ধূমপান করেন, সেখানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
নিজের ট্রিগার পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করুন:
যেকোনো অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ হয় কিছু ট্রিগার দ্বারা। খেয়াল করুন, ঠিক কখন কখন আপনার ব্রেইন সিগারেটের জন্য পাগল হয়ে এঠে? কাজের চাপে? পরীক্ষার চাপের সময়? গভীর রাতে দুঃখের গান শোনার সময়? নাকি দুপুরের খাবারের পর পর? এই সময়গুলো অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, প্রয়োজনে চাপ এড়াতে হবে। রাত জাগা বন্ধ করতে হবে। যখন খুব বেশি সিগারেট খেতে ইচ্ছা করে, তখন চকলেট, চুইংগাম, যষ্টিমধু বা আদা–লবঙ্গ চিবাতে পারেন।
ব্যস্ত থাকুন:
সিগারেট ছাড়ার জন্য অনেক সময়ই পরামর্শ দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার না, বরং রোববার থেকে ধূমপান ছাড়া শুরু করুন। কারণ, একটা কর্মব্যস্ত সপ্তাহ আপনাকে সিগারেটের তাড়না থেকে দূরে রাখতে পারে অনেকখানি।
ভুল থেকে শিক্ষা নিন, হতাশা নয়:
এতকিছুর পরেও বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দুই–এক টান দিয়েও ফেলতে পারেন টংয়ের আড্ডায়। এতেই হতাশ হয়ে চেষ্টা বাদ দিবেন না। বরং এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের টানটা যাতে আর না দেন, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই হতাশ হওয়া চলবে না।
নিজেকে পুরস্কার দিন:
ছোট ছোট লিখিত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। হতে পারে সেটা ৩ দিন, ৭ দিন বা ১০ দিনের। এরপর সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে টিক চিহ্ন দিন এবং নিজেকে ছোটখাটো পুরস্কার দিন। এতে আপনি পরের লক্ষ্য অর্জনে আরও বেশি চেষ্টা করার শক্তি পেয়ে যাবেন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন:
প্রচুর পানি, ফল, শাকসবজি খান। ভোরের রোদে হাঁটুন। ‘সকাল সকাল’ ঘুমিয়ে পড়ুন। পরিবারের সঙ্গে একাত্ম থাকুন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
যেহেতু আপনি এই লেখাটা পড়ছেন, সেহেতু আপনি ধূমপান ছাড়ার প্রথম পদক্ষেপটা ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন। কাজেই, আরেকটু সাহস করে পরের পদক্ষেপগুলোও নিয়ে ফেলতে পারলে ধূমপানমুক্ত জীবন আপনার পক্ষেও সম্ভব। একটু কষ্ট করলেই যদি আপনার শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সুন্দর একটা জীবনযাপন করা যায়, তবে সেই কষ্ট করতে ক্ষতি কী?