এক কাপ কফি ছাড়া অনেকেই তাদের সকাল কল্পনা করতে পারেন না। ক্লান্তি, অবসাদ,ঘুম ঘুম ভাব দূর করতে কফির জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে সতর্ক হতে হবে।
কফিকে কোনো কোনো সময় অস্বাস্থ্যকর মনে করা হলেও কফি পানের উপকারিতা আছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার, লিভারের রোগ এবং এমনকি বিষণ্নতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
ডায়াবেটিসে কফির উপকারিতা :
বেশ কয়েক দশক ধরে গবেষণায় আসছিল, নিয়মিত কফি পানে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমতে পারে। কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি বিরাট সুসংবাদ। কিন্তু যাঁদের ইতিমধ্যেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য কফি কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে? এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। এখানেও ফল কফি পানের পক্ষে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কফির ভূমিকা নিয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে এক লাখের বেশি মানুষকে নিয়ে চার বছর ধরে গবেষণা করেন। তাঁরা দেখেছেন, যাঁরা প্রতিদিন এক কাপের বেশি কফি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছেন, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১১ শতাংশ কম।
যাঁরা প্রতিদিন এক কাপ কফি খাওয়া কমিয়েছেন, তাঁদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, ক্যাফেইন স্বল্প মেয়াদে গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে।
পুরুষদের নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিক্যাফিনেটেড কফি, এমনকি রক্তে শর্করার তীব্র বৃদ্ধি দেখায়। সীমিত গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, ক্যাফেইন ও ডায়াবেটিসের প্রভাব সম্পর্কে আরও গবেষণা দরকার। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কফি ও ক্যাফেইনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব প্রি-ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
অভ্যাসগত কফি পান
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ডায়াবেটিসহীন ব্যক্তিরা কফি ও ক্যাফেইনের প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানান, তার মধ্যে স্পষ্ট একটি পার্থক্য আছে। ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অভ্যাসগত কফি পানকারীদের প্রতিদিনের কাজকর্মের সময় নিয়মিত তাঁদের রক্তে শর্করার ওপর নজর রাখা হয়েছিল। এতে দেখা গেছে, কফি হতাশার ঝুঁকি কমায় এবং ফোকাস ও চিন্তার ক্ষমতা বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায়ও তা প্রযোজ্য।
নিয়মিতভাবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা চিনিসমৃদ্ধ কফি পান ইনসুলিন প্রতিরোধকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। চিনি-মিষ্টি, এমনকি কৃত্রিমভাবে তৈরি মিষ্টি কফি ও অন্যান্য পানীয় সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। মিষ্টি যোগ করা হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত কফি পানে রক্তের কোলেস্টেরল ভালো থাকে। কফি ক্ষুধামান্দ্য করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
জেনে রাখা ভালো, কফি মানে গরম পানিতে কফির লিকারে কোনো চিনি বা দুধ যোগ করা যাবে না।
সুইডেনের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, ফিল্টার কফির প্রভাবে যেভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস যেভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে তার ধারে কাছেও থাকে না বয়েলড কফি পান করলে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ক্যাফেইন যুক্ত কফি পানে ক্লান্তি দূর হয়। অন্যদিকে ক্যাফেইন যুক্ত বা বিহীন যে কোনো ধরনের কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত খেতে পারেন গ্রিন কফি।
শরীরের বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে
পুষ্টিবিদরা বলছেন, গ্রিন কফি পান করার ফলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। গ্রিন কফি লিভার সুস্থ রাখে। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়তে দেয় না।
শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে
গ্রিন কফিতে উপস্থিত ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড শরীরের বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে। হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ওজন বাড়তে পারে না। বাড়তি মেদ ঝরাতে শরীরচর্চার পাশাপাশি গ্রিন কফিও খেতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কাজের চাপ, উদ্বেগ সব মিলিয়ে বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ গ্রিন কফি রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত গ্রিন কফি খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার চটজলদি সমাধান হয়।
দিনে ২ কাপ কফি, ধৈর্য ও গতি বাড়াতে সহায়ক। নিয়মিত কফি পান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে। এ ছাড়া কফিতে বাতের সমস্যা কমে।