সাধারণত শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের পর্যায়ের ক্ষেত্রে ১৮ মাস থেকে ৩৮ মাস বয়সের মধ্যেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়। অটিস্টিক শিশুরা নিজস্ব একটা মনোজগত তৈরি করে।চারপাশ থেকে আলাদা তাদের এ জগত। তাদের আচরণও স্বাভাবিক হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনোবিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা প্রভৃতির কথা বলে থাকেন।
যদি দেখা যায়—
* ৬ মাস বয়সের মধ্যে শিশু একা একা না হাসে
* ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো বোল বলতে পারছে না, পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা করছে না
* ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ বলতে পারে না
* ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না
* ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারার পর আবার ভুলে যাচ্ছে
* বয়স উপযোগী সামাজিক আচরণ করছে না
এসব লক্ষণ দেখা গেলে তখন তাকে অবশ্যই অটিজমের বৈশিষ্ট্য আছে কি না, বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
অটিজম রয়েছে এমন শিশুর মধ্যে মূলত দুই ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়,
* সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে অসুবিধা এবং আশপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা
* বারবার একই ধরনের আচরণ করা
যেসব সমস্যা থাকতে পারে
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে খিঁচুনি (মৃগী), অতিচঞ্চলতা (হাইপার অ্যাক্টিভিটি), বুদ্ধির ঘাটতি, হাতের কাজ করতে জটিলতা, হজমের সমস্যা, দাঁতের সমস্যা, খাবার চিবিয়ে না খাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে।
আরো পরুন:
- চোখের সমস্যার লক্ষন ! কী কী জানেন চোখের রোগ নিয়ে?
- অতিরিক্ত ঘুম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
- ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) পরিচালিত সর্বশেষ জরিপ (২০১৮ সালে প্রকাশিত) অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতি ৫৯ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম রয়েছে। মেয়েশিশুদের তুলনায় ছেলেশিশুদের অটিজমের বৈশিষ্ট্য থাকার আশংকা প্রায় ৪ গুণ বেশি। বিগত ৪০ বছরে সারা বিশ্বে অটিজমের হার বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। এর মূল কারণ, বারবার অটিজমের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়েছে, ফলে অটিজমের বৈশিষ্ট্যের পরিধি বেড়েছে।
দরকার সম্মিলিত পরিচর্যা্
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের পরিচর্যার জন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে তা হলো:
* বাবা–মায়ের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ
* শিক্ষক, চিকিৎসক, থেরাপিস্টসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে পরিচর্যায় অংশ নেওয়া
* কাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য শিশুকে উৎসাহিত করা
* শুরুতে সাধারণ মূলধারার স্কুলে প্রেরণ
* স্কুলের পাশাপাশি বাড়িতেও শিশুকে সামাজিক রীতিনীতি শেখানোর চেষ্টা
* সামাজিক অনুষ্ঠানে শিশুর অংশগ্রহণ
* শিশুর উৎসাহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া, সেটির চর্চা করা (যেমন ছবি আঁকা, গান গাওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদি)
* প্রয়োজনে বিশেষায়িত স্কুলের সাহায্য নেওয়া
* ভাষার দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা (স্পিচ থেরাপি), প্রয়োজনে ইশারা ভাষা শেখানো
* অকুপেশনাল থেরাপি (দৈনন্দিন কাজ, বৃত্তিমূলক কাজ ইত্যাদি শেখানো)
* সাইকোথেরাপি, প্লে–থেরাপি, সেনসরি ইন্টিগ্রেশন (সংবেদনশীলতা বাড়ানোর কৌশল) ইত্যাদি
* সমস্যা অনুযায়ী কিছু ওষুধ প্রদান, তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
আরো পরুন:
- চোখের সমস্যার লক্ষন ! কী কী জানেন চোখের রোগ নিয়ে?
- অতিরিক্ত ঘুম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
- ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে
অটিজমের বৈশিষ্ট্য নির্ণয় আর পরিচর্যার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ভ্রান্ত ধারণা আর বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। আধুনিক যুগের যত ধরনের সহায়ক প্রযুক্তি রয়েছে, তার উপযুক্ত প্রয়োগ করে অটিজম আছে এমন ব্যক্তিরা আরও গুণগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে, নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারবে। অটিজমকে ভয় না পেয়ে অটিজম আছে এমন শিশুকে আড়ালে না রেখে উপযুক্ত পরিচর্যা আর সেবা দেওয়া প্রয়োজন। এতে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিরা সমাজে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী অবদান রাখতে পারবে।
অটিজমের লক্ষণ:
‘আরওয়া’ বয়স দুই বছর চার মাস। সে কথা বলতে শিখেনি। ডাকলে সাড়া দেয় না। ডাকলে চোখের দিকে তাকায় না। একা একা থাকে, বাড়িতে সমবয়সী কোনো শিশু এলে তাদের সঙ্গে মেশে না। মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে পড়ে, কখনো নিজেকে আঘাত করে, একই কাজ বারবার করে। যেমন বারবার হাত নাড়ায়। অস্থির, শুধু দৌড়াদৌড়ি করে। শরীর অল্পতেই ঠাণ্ডা লাগে। সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করলেও শরীর পুষ্টি পায় না। সে একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত সমস্যা। মায়ের গর্ভ থেকে জন্মের কয়েক বছর পর পর্যন্ত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটতে থাকে। কোনো কারণে স্নায়ুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হতে পারে।
অটিজম শিশুর মধ্যে নিম্নলিখিত কারণসমূহ দেখা যায়:
– ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা বলতে পারছে না, পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা করছে না।
– ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ বলতে পারে না।
– ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না।
– বয়স উপযোগী সামাজিক আচরণ করছে না।
– ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারার পর আবার ভুলে যাচ্ছে।
আরো পরুন:
- চোখের সমস্যার লক্ষন ! কী কী জানেন চোখের রোগ নিয়ে?
- অতিরিক্ত ঘুম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
- ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে
অটিজম কি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব?
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ জীবন আচরণ স্বাভাবিক ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক শিশুই অটিস্টিক হওয়া সত্তেও স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছে। এই জন্য অটিজম শিশুর অবিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। শিশুর ছোট বয়স থেকেই প্রয়োজনীয় ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে ‘ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে অটিজম শিশুর অবিভাবকদের জন্য প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ফ্রি কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।