পায়ের গোড়ালি ব্যথা একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা যা অনেকেরই দেখা যায়। এই ব্যথা কখনও কখনও সামান্য অস্বস্তি থেকে শুরু করে, কখনও আবার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।যেমন-
১. প্ল্যান্টার ফাসাইটিস – প্ল্যান্টার ফাসাইটিস পায়ের গোড়ালির নিচে একটি পেশী বাহিনীর প্রদাহ। এটি সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরে পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। এই সমস্যা মূলত অতিরিক্ত চাপ বা অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে হয়।
লক্ষণ:
– সকালে উঠে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়।
– পায়ের গোড়ালির তলদেশে ব্যথা।
২. অ্যাকিলিস টেনডোনাইটিস – অ্যাকিলিস টেনডোনাইটিস পায়ের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ টেনডনের প্রদাহ। এই সমস্যাটি সাধারণত অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভুলভাবে অনুশীলনের কারণে হয়। এটি খেলাধুলার লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
লক্ষণ:
– পায়ের পিছনে ব্যথা।
– টেনডনের জায়গায় ফোলা।
৩. গোড়ালির হাড়ে আঘাত – গোড়ালির হাড়ে আঘাত বা ফ্র্যাকচার পায়ের গোড়ালির ব্যথার আরেকটি কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত হঠাৎ করে আঘাত বা দুর্ঘটনার কারণে ঘটে।
লক্ষণ:
– গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা।
– হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় অসুবিধা।
৪. হিল স্পার – হিল স্পার পায়ের গোড়ালির নিচে একটি হাড়ের বৃদ্ধির কারণে ঘটে। এই বৃদ্ধির কারণে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হয়। এটি সাধারণত প্ল্যান্টার ফাসাইটিসের সাথে সম্পর্কিত।
লক্ষণ:
– গোড়ালির তলায় তীব্র ব্যথা।
– দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে।
৫. বোন স্পার – বোন স্পার হলো হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি যা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে বা অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়।
লক্ষণ:
– পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা।
– কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্বক লাল হয়ে যায়।
৬. মিসেলনিয়াস মেটাটারসাল পেইন – মেটাটারসাল পেইন পায়ের মাঝের অংশে ব্যথার কারণ হতে পারে, যা গোড়ালি পর্যন্ত বিস্তার করতে পারে। এটি সাধারণত পায়ের পেশী বা হাড়ের অতিরিক্ত চাপের কারণে ঘটে।
লক্ষণ:
– পায়ের মাঝের অংশে ব্যথা।
– গোড়ালি পর্যন্ত ব্যথার অনুভূতি।
৭. ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি – ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হল ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি। এটি পায়ের গোড়ালিতে ব্যথার কারণ হতে পারে, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস থাকলে।
লক্ষণ:
– পায়ের গোড়ালিতে খিঁচুনি।
– টনসিল বোধ হওয়া।
চিকিৎসা এবং পরামর্শ
প্রথম ধাপে, চিকিৎসককে পায়ের গোড়ালির ব্যথার কারণ নির্ধারণের জন্য একটি বিস্তারিত পরীক্ষা করবেন। এই পরীক্ষার মধ্যে ক্লিনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন, এক্স-রে বা এমআরআই স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সবচেয়ে উপযুক্ত।
–ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি যেমন স্ট্রেচিং, শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম, এবং ম্যাসাজ পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি পেশী শক্তিশালী করে এবং জয়েন্টের মুভমেন্ট উন্নত করে।
–মেডিকেশন
ব্যথা কমানোর জন্য চিকিত্সক বিভিন্ন ধরণের ওষুধ যেমন এনএসএআইডি (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs) প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এই ওষুধগুলি প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা উপশমে সহায়ক হয়।
–ইনজেকশন
যদি ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয় এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ না করে, তাহলে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে। এটি সরাসরি ব্যথার জায়গায় প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
–অর্থোটোটিক্স এবং সাপোর্ট
চিকিত্সক পায়ের সাপোর্ট বা কাস্টম অর্থোটোটিক্স (যেমন স্পেশাল শু ইনসোল) পরিধানের পরামর্শ দিতে পারেন। এটি গোড়ালির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে।
– সার্জারি
অন্যান্য পদ্ধতিগুলি ফলপ্রসূ না হলে, মাঝে মাঝে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারির মাধ্যমে সমস্যা নিরাময় করা হয় যেমন প্ল্যান্টার ফাসিইটিসের ক্ষেত্রে ফাস্সিয়া রিলিজ।
পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং সঠিক নির্ণয়ের জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি আপনি ক্রমাগতভাবে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে চিকিৎসক দ্বারা পরামর্শ ও সঠিক পরীক্ষা করা উচিত। Healthx BD
আরও জানুন-
–সাইনুসাইটিস কারণ – ধরণ ও প্রতিরোধে করণীয়