দৈহিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে ত্বকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের যত্ন নিয়ে আমরা নানা ধরনের সৌন্দর্যচর্চা করে থাকি। কিন্তু জিনগত, পরিবেশগত বা হরমোনাল কারণে অথবা সঠিক যত্নের অভাবে অনেক সময় অল্প বয়সেই ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে ভাঁজ পড়া, ঝুলে যাওয়া, টান টান ত্বক হারানো বা কুঁচকে যাওয়া সাধারণ বিষয়। দাগও পড়ে।
প্রাচীনকাল থেকে ত্বকচর্চার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে, যার মধ্যে আধুনিকতম হল লেজার চিকিৎসা। ত্বকের সমস্যা বা সৌন্দর্যচর্চার জন্য যখন প্রচলিত প্রসাধনসামগ্রী, ঘরোয়া চিকিৎসা বা প্রথাগত পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তখন লেজার চিকিৎসা একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ব্যথাহীন এবং কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই করা হয়।
লেজার চিকিৎসা যেভাবে করা হয় –
এটি একটি ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট যা ত্বকে নতুন কোষ প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্যে করা হয়। এই চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় প্রথমে লেজার রশ্মি সরাসরি ত্বকের উপর প্রয়োগ করা হয়। লেজারের প্রভাবে ত্বকের ভেতরের বিভিন্ন উপাদান, যেমন পানি, অক্সি-হিমোগ্লোবিন এবং মেলানিন, লেজার রশ্মি শোষণ করে এবং তাপ উৎপন্ন করে। এই তাপ ত্বকের টিস্যু ধ্বংস করে, যার মাধ্যমে চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। পরে ধীরে ধীরে ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে ত্বকের রঙ ও টেক্সচার উন্নত হয়।
কারা লেজার ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন-
মুখ বা চোখের চারপাশে দাগ বা বলিরেখা, ব্রণ বা গুটি বসন্তের কারণে সৃষ্ট ক্ষত, ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ বা মেছতা, জন্মদাগ, ট্যাটু, বয়সজনিত ভাঁজ, রোদে ঝলসানো ত্বক, কসমেটিক সার্জারির পর ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা, নাকের ওপর বা দুই পাশে তেলগ্রন্থির বৃদ্ধি, এবং মেয়েদের মুখে অবাঞ্চিত লোম—এসব ত্বকের সমস্যার সমাধানে লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে লেজার প্রযুক্তি-
অবাঞ্চিত লোম ও চুল – লেজার ফ্লুক্স ১০০০ ডায়োড মেশিন, ইনটেন্স পালস লাইট লেজার মেশিন বা লং পালসড এনডি ইয়াগ লেজার ব্যবহৃত হয়। এসব মেশিন ত্বকের গভীর স্তরে গিয়ে অবাঞ্চিত লোম বা চুলের শিকড় ধ্বংস করে, যা সম্পূর্ণভাবে ব্যথাহীন ও রক্তপাতহীন।
ব্রণ – ব্রণ নিরাময়ে পালসড ডাই লেজার অথবা ব্লু লাইট ব্যবহার করা হয়, যা ব্রণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এই চিকিৎসায় অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না।
দাগ – কিউ সুইচড এনডি ইয়াগ লেজার মেশিন এবং আধুনিক পিকো লেজারের মাধ্যমে দাগ অপসারণ করা হয়। এই চিকিৎসা জন্মদাগ, মুখের দাগ, এবং ত্বকের লোম দূরীকরণে কার্যকর।
টিউমার – ত্বকের টিউমার, আঁচিল, ক্যানসার এবং বয়সজনিত বলিরেখা দূরীকরণে লেজার ব্যবহার করা হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত লেজার এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ, এবং এই চিকিৎসার জন্য অ্যানেসথেশিয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
লেজার চিকিৎসার দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে – অ্যাবলেটিভ এবং নন-অ্যাবলেটিভ। তাই প্রথমে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আপনার ত্বকের ধরন দেখে সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। এছাড়াও, চিকিৎসা কোথায় নেওয়া হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ; আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মানসম্পন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে এই চিকিৎসা করা উচিত।
যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখবেন-
১)সূর্যালোক এড়িয়ে চলা: লেজারের আগে কয়েক দিন অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, যাতে ত্বক ট্যান বা পুড়ে না যায়। বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
২)ত্বকচর্চার পরিবর্তন: লেজার চিকিৎসার অন্তত চার সপ্তাহ আগে ত্বকচর্চা পদ্ধতি যেমন লেজার রিসারফেসিং, ডিপ ক্লিনজিং, বা ফেস মাস্ক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩)ওষুধের ব্যবহার: লেজার চিকিৎসার অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে আলোক সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে এমন কোনো ওষুধ (যেমন, ব্রণের জন্য ডক্সিসাইক্লিন) গ্রহণ করবেন না।
৪)রোগের ইতিহাস: যদি দাদ বা জ্বরঠোসার মতো হার্পিসজাতীয় কোনো রোগের পূর্ব ইতিহাস থাকে, তবে চিকিৎসককে জানিয়ে দিন।
৫)চোখের সুরক্ষা: লেজার চিকিৎসার সময় চোখে লেজার রশ্মির প্রতিরোধক চশমা পরিধান করতে হবে।Healthx BD
আরও জানুন-