বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্কিৎজোফ্রেনিয়া একটা জটিল মানসিক রোগ।এই রোগ পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের সমানভাবে হয়। তবে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রতি একশ জনের মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়।
এসব রোগীরা অনবরত একা একা কথা বলতে থাকেন। তাদের কথাগুলোর মধ্যে তেমন একটা সামঞ্জস্যতা নেই। কখনও বা কোন কারণ ছাড়া হাসতে থাকা, অদৃশ্য কোনো কিছুর সঙ্গে অনবরত কথা বলতে থাকা ইত্যাদি।তাই সময়মত চিকিৎসা না হলে এই রোগ বিপজ্জনক আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি হত্যা বা আত্মহত্যার ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে এটি।Healthxbd
বর্তমানে সারা বিশ্বে কমপক্ষে দুই কোটি ৬০ লাখ লোক সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগছেন। বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে দিন দিন সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় ০.২৪% লোক সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। সেই হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ লক্ষ লোক সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত।
সিজোফ্রেনিয়া কী ও কেন হয়ঃ
সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জেনেটিক। তবে সিজোফ্রেনিয়া কেন হয় তার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। সাধারণত বংশে কারো সিজোফ্রেনিয়া থাকলে পরে আরেকজনের হতে পারে।মস্তিষ্কে কিছু নিউরোট্রান্সমিটার বা ক্যামিকেলের অস্বাভাবিকতা, ঘাটতি কিংবা তারতম্য হলে এই রোগটি হয়ে থাকে।সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া রোগের উপসর্গ বেশি দেখা দেয়। তবে যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে।Healthxbd
সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণঃ
- একা একা কথা বলা, চুপচাপ থাকা, কারও কথার জবাব না দেওয়া, কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর না দেওয়া, কানে অলিক কথা শোনা, অসংলগ্ন কথা বলা, প্রতিদিনের কাজ সঠিকভাবে না করা, ভ্রান্ত বিশ্বাস, অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা (ডিল্যুশন), অবাস্তব চিন্তাভাবনা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, হ্যালুসিনেশন হয়। হ্যালুসিনেশন অর্থ ব্যক্তি এমন কিছু শুনতে পান, নাকে গন্ধ পান, চোখে দেখতে পান, এমনকি স্পর্শ অনুভব করতে পারেন যেটির কোনো ভিত্তি বা সত্যতা নেই।
- এ ধরনের রোগীরা কতগুলো অবাস্তব দৃশ্য দেখার দাবি করেন। অবাস্তব স্পর্শ অনুভূতির কথা বলেন। তার চামড়ার ভেতরে পোকা হাঁটহাঁটি করছে। কিছু রোগীকে বলতে শোনা যায়, পেটে ও মাথায় পোকা কিলবিল করছে।
- Healthxbd নানা রকম পেশী ব্যথা এবং মাথা ব্যথা আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। মাথা ব্যাথা ও সাধারণ উপসর্গ, এবং স্ট্রেস, টেনশন এবং উদ্বেগ সহ বিভিন্ন কারণের কারণে হতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা, যেমন অনিদ্রা, মানসিক অসুস্থতার একটি সাধারণ উপসর্গ। মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
- ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি সিজোফ্রেনিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ।
আরো জানুন-
- গর্ভবতী মায়ের জন্য খাবারের তালিকা
- চোখ শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দ্রুততম পেশী দ্বারা চালিত
- শীতে ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখবেন কিভাবে
সিজোফ্রেনিয়া রোগের চিকিৎসা
- রোগীর ইচ্ছায় হোক বা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই হোক, তাকে যেকোনোভাবে অবশ্যই একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। উপসর্গ দেখে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা-নীরিক্ষার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগ শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে।
- সিজোফ্রেনিয়া রোগীর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে ওষুধ সেবন।আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সারা জীবন রোগীদের ওষুধ খেতে হয়। এসব রোগীদের সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, পরিবারের কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হয়।
- সিজোফ্রেনিয়া যেহেতু নিরাময়যোগ্য রোগ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময় হয় না। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি।Healthxbd
সিজোফ্রেনিয়া রোগ থেকে মুক্তি পেতে যেসব খাবার খেতে পারেনHealthxbd
- সিজোফ্রেনিয়ার ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে আপনি এলাচ ব্যবহার করতে পারেন। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে এবং সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ গুলো হ্রাস করতে পারে। এলাচের গুঁড়া এক চা চামচ, এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ভিটামিনের অনেক ঘাটতি থাকে। ভিটামিন ডি এর মতো অন্যান্য ভিটামিনগুলোর ঘাটতির কারণেও সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বা পরিপূরক গ্রহণ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ গুলো হ্রাস করতে পারে।
- জিনসেং সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ গুলো থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করতে পারে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মস্তিষ্কের কোষগুলো ধ্বংস করে, মস্তিষ্ক-সম্পর্কিত রোগ গুলোর ঝুঁকি বাড়ায়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করা সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। জিনসেংয়ের নিউরো প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মস্তিষ্কের নিউরনগুলো রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছের তেল সেজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো বিষয়টি কম-বেশি সবাই জানেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষত, এটি জ্ঞানীয় লক্ষণ প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এটি ভুক্তভোগীর আচরণে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে থাকে।
- গাজর সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে । নায়াসিন (ভিটামিন বি৩) পাওয়া যায় গাজরে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়াসিনের ঘাটতিও সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলোর সাথে জড়িত। নিউরনের ঘাটতি তে হ্যালুসিনেশন বৃদ্ধিও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, গাজরের মতো নিয়াসিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ গুলো হ্যালুসিনেশন এবং সাইকোটিক বৈশিষ্ট্যগুলো হ্রাস করতে সহায়তা করে ।Healthxbd
সিজোফ্রেনিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়
- সবসময় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা জরুরি।
- সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ভিটামিনের ঘাটতি থাকে। ভিটামিন ডি এর মতো অন্যান্য ভিটামিনগুলোর ঘাটতির কারণেও সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ গুলো হ্রাস করতে পারে।
- মাছের তেল সেজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো বিষয়টি কম-বেশি সবাই জানেন।
- নিয়মিত শরীর চর্চা করলে শরীর ভালো থাকে, যাদের মুড সুইং হয় তারা ব্যায়াম করলে ভালো উপকার পাবে। ব্যায়াম মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। শরীর চর্চা প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। স্বাস্থ্য রক্ষা করে। মানুষের শরীর ও হাড়ের জোড়াকে মজবুত করে। শরীর চর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি দেয়।
- পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম
- নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার
- পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটান.Healthxbd
সিজোফ্রেনিয়ার সর্বাত্মক ঝুঁকিঃ
সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের আত্মহত্যা করার ঝুঁকি থাকে, অন্যকে হত্যা করারও ঝুঁকি থাকে। নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা থাকে। এ ছাড়া পড়ালেখা, অফিসের কাজ, ব্যক্তিগত কাজ অর্থাৎ সব কাজে তার মনোযোগ ও সক্ষমতা কমে যায়।
আরো জানুন-