প্রশমনমূলক চিকিৎসা বা উপশমমূলক চিকিৎসা বলতে রোগের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাকে বোঝায়। এটি রোগের মূল কারণ দূর করে না, অর্থাৎ রোগের নিরাময় করে না, বরং রোগের বাহ্যিক উপসর্গগুলিকে প্রশমন বা উপশম করে বা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে রোগীর জীবনযাপন অধিকতর সহজ ও আরামদায়ক হয়।
উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা
- ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেহের প্রতিটি অংশের চিকিৎসা দিতে পারেন (সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের বিষয়াদি বাদে)। জ্বর, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কাশি, পেটব্যথা ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ নিয়েই তাঁদের কাছে যাওয়া যেতে পারে। তবে প্রয়োজনে তাঁরা আপনাকে নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েও দিতে পারেন।
- কাশি বা শ্বাসকষ্টের জন্য বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, কেবল ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাতেই শ্বাসকষ্ট হয় না। হৃৎপিণ্ডের সমস্যাতেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমনকি রক্তশূন্যতার রোগীও একপর্যায়ে শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন। তাই বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও যেতে বলতে পারেন।
- হৃদ্রোগের জন্য হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট) যেমন রয়েছেন, তেমনি হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচারের জন্য কার্ডিয়াক সার্জনও রয়েছেন।
- পেটব্যথা, অ্যাসিডিটি, বমি, পাতলা পায়খানার জন্য যেতে পারেন পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে। রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া কিংবা কালো পায়খানা হবার মতো উপসর্গেরও চিকিৎসা করবেন তিনি।
- হাড় ভেঙে বা মচকে গেলে কিংবা হাড়ে টিউমারজাতীয় কিছু দেখা দিলে অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথার জন্য যেতে পারেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে (ফিজিওথেরাপিস্ট নয়)। জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, এমন নির্দিষ্ট কিছু রোগের জন্য রিউমাটোলজিস্টের কাছেও যেতে হতে পারে।
- নখ উপড়ে গেলে, পায়ুপথের সমস্যা কিংবা দীর্ঘমেয়াদী কোষ্টকাঠিন্য হলে জেনারেল সার্জনের কাছে যেতে পারেন। পাঁজরে আঘাতের জন্য প্রয়োজন থোরাসিক সার্জন।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে, মুখ ফুলে গেলে কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। পেট ফোলা বা রক্তবমির মতো সমস্যা হতে পারে লিভারের সমস্যায়। লিভারের সমস্যা ধরা পড়লে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- প্রস্রাব করতে অসুবিধা হলে, অল্প অল্প করে প্রস্রাব ঝরলে ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন।
- মাসিক অনিয়মিত হলে হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিসের জন্যও তাঁরাই বিশেষজ্ঞ।
- রক্তরোগ (রক্তের ক্যানসারসহ) চিকিৎসা দেন হেমাটোলজিস্ট। অন্যান্য ক্যানসারের চিকিৎসা দেন অনকোলজিস্ট।
- শিশুদের জন্য যেমন পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ, তেমনি বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য আছে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ।
- শিশুদের কিডনির রোগ, স্নায়ুরোগ, রক্তরোগ, সার্জারি প্রভৃতির জন্যও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।
- আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও যদি অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে, তাহলে এন্ডোস্কপি এবং কোলনস্কপি পরীক্ষার জন্যও আপনাকে পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হতে পারে।
- কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, তা বুঝতে না পারলে আপনার নিকটস্থ এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
উপসর্গ মনে রাখার কৌশল
যদিও বাংলা আমাদের মাতৃভাষা কিন্তু, বাংলা ব্যকারণের নাম শুনলে অনেকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আসলে, বাংলা ব্যাকরণে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমরা অনেকেই বুঝি না। আর বুঝলেও মনে রাখতে পারি না।
এই যেমন ধরুন উপসর্গ। স্কুলে থাকতে যেমন সমস্য হতো উপসর্গ মনে রাখা নিয়ে। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরি পরীক্ষাতেও উপসর্গ মনে রাখা জরুরি হয়ে যায়। তবে যদি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল জানা থাকে তাহলে, এই সমস্যায় পড়তে হয় না।
খাঁটি বাংলা উপসর্গ মনে রাখার কৌশল
এদের সংখ্যা ২১ টি। যথা: অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন, কদ,, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।
উদাহরন:
- অ = অচেনা, অজানা
- অঘা = অঘারাম
- অজ = অজপুকুর
- অনা = অনাবৃষ্টি
- আ = আকাঠা
- আড় = আড়চোখে
- আন = আনমনা
- আব = আবছায়া
- ইতি = ইতিহাস
- ঊন = ঊনিশ
- কদ = কদাকার
- কু = কুনজর
- নি = নিখুঁত
- পাতি = পাতিলেবু
- বি = বিফল
- ভর = ভরপেট
- রাম = রামদা
- স = সরব
- সা = সাজোয়ান
- সু = সুনজর
- হা = হাপিত্যেশ
উপরে কতগুলো উপসর্গ নিশ্চয় দেখেছেন। এখন এগুলো মনে রাখা নিশ্চয় অসম্ভব মনে হচ্ছে! কোন সমস্যা নেই। আপনি নিচের চিঠিটা মুখস্ত করে ফেলেন।
সুহাস,
প্রথমেই আদর নিবি। তুই তো জানিসই, তুই আমাদের এই অজপাড়াগাঁয়ের একমাত্র আশা আর ভরসা। আর শোন, কিছু মানুষের অনাচার, কুকথা আর ঐ আড়চোখে তাকানো কে কিন্ত মোটেও পাত্তা দিবি না। তোর জন্য আবরার ঊনত্রিশ টি পাতিলেবু সাথে কয়েকটি কদবেল পাঠিয়েছে। অচেনা জায়গায় গিয়েছিস। আনমনে হয়ে থাকলে খাবি। ভালো লাগবে।
ইতি
অঘারাম
চিঠি পড়া শেষ আশা করি। এবার দেখুন ম্যাজিক। চিঠির প্রতিটি শব্দের মধ্যেই আছে উপসর্গগুলো।
সু (সু), হা (হা), স (স),
প্রথমেই আদর (আ) নি (নি) বি (বি)। তুই তো জানিসই, তুই আমাদের এই অজপাড়াগাঁয়ের (অজ) একমাত্র আশা আর ভরসা (ভর) (সা)। আর শোন, কিছু মানুষের অনাচার (অনা), কুকথা (কু) আর ঐ আড়চোখে (আড়) তাকানো কে কিন্ত মোটেও পাত্তা দিবি না। তোর জন্য আবরার (আব) ঊনত্রিশ (ঊন) টি পাতিলেবু (পাতি) সাথে কয়েকটি কদবেল (কদ) পাঠিয়েছে। অচেনা (অ) জায়গায় গিয়েছিস। আনমনে (আন) হয়ে থাকলে খাবি। ভালো লাগবে।
ইতি (ইতি)
অঘারাম (অঘা) (রাম)
বাংলা উপসর্গ দিয়ে কিছু বাক্যে
- ইতিহাস যে কথা কয়।
- আমি অবেলাতে দিলাম পাড়ি অথৈ সায়রে।
- ভরদুপুরে তুমি কোথায় যাও?
- এতদিন কোথায় গিয়ে নিখোঁজ হয়ে ছিলে?
সংস্কৃত উপসর্গ মনে রাখার কৌশল
সংস্কৃত উপসর্গকে তৎসম উপসর্গও বলা হয়। এদের সংখ্যা হলো ২০ টি।
প্র, পরা, অপ, সম, নি, অনু, অব, নির, দুর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অতি, অপি, অভি, উপ, আ।
উদাহরন:
- প্র = প্রভাব, প্রচলন
- পরা = পরাজয়
- অপ = অপমান
- সম = সম্পূর্ণ
- নি = নিষেধ
- অনু = অনুতাপ
- অব = অবরোধ
- নির = নির্ভর
- দুর = দুর্নাম
- বি = বিফল
- অধি = অধিকার
- সু = সুকন্যা
- উৎ = উন্নতি, উৎক্ষিপ্ত
- পরি = পরিশেষ
- প্রতি = প্রতিধ্বনি
- অতি = অতিবৃষ্টি
- অপি = অপিনিহিত
- অভি = অভিমুখ
- উপ = উপবন
- আ= আভাস
নিচের চিঠিটা মুখস্ত করে ফেলুন।
প্রিয় প্রভাস,
পরাজয়, অপমানের সম্মুখীন না হয়ে এগিয়ে যাও। নিজে অবহেলা অনুভব করো না। নির্ভয়ে দুর্গম পথ এগোও। বিশুদ্ধ মনে সুচরিত্র উৎপন্ন হয়। অধিকার পরিপূর্ণ কর। প্রতিটি ভালো কাজ উপভোগ কর।
অতি ভাল থেকো। আজ আর নয়।
ইতি
অপি
এবার দেখুন, চিঠির প্রতিটি শব্দের মধ্যেই আছে উপরের সংস্কৃত উপসর্গগুলো।
প্রিয় প্রভাস (প্র),
পরাজয় (পর), অপমানের (অপ), সম্মুখীন (সম্) না হয়ে এগিয়ে যাও। নিজে (নি) অবহেলা (অব) অনুভব (অনু) করো না। নির্ভয়ে (নির) দুর্গম (দুর) পথ এগোও। বিশুদ্ধ (বি) মনে সুচরিত্র (সু) উৎপন্ন (উৎ) হয়। অধিকার (অধি) পরিপূর্ণ (পরি) কর। প্রতিটি (প্রতি) ভালো কাজ উপভোগ (উপ) কর।
অতি (অতি) ভাল থেকো। আজ (আ) আর নয়।
ইতি
অপি (অপি)
সংস্কৃত উপসর্গ দিয়ে কিছু বাক্যে
- সমাগত সুধীজন।
- তাদেরকে সাদর অভিনন্দন জানানো হলো।
- বর্গের পরিসীমার সূত্র মনে রেখো।
- অনেক দিন তার সাথে চিঠি আদান প্রদান হয় না।
বিদেশি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল
বিদেশি উপসর্গ গুলোর মধ্যেও আছে প্রকারভেদ।
- ফারসি উপসর্গ
- আরবি উপসর্গ
- ইংরেজী উপসর্গ
- হিন্দি- উর্দু উপসর্গ
এই চার ধরনই বিদেশি উপসর্গের অন্তর্ভুক্ত।
ফরাসি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল
ফরাসি উপসর্গ ১০ টি। এরা হলো- কার্, দর্, না, নিম্, ফি, বদ্, বে বর্, ব, কম্।
উদাহরণ:
- কার্ = কারখানা, কারবার
- দর্ = দরদালান, দরপাট্টা
- না = নারাজ, নাখোশ
- নিম্ = নিমরাজি
- ফি = ফি-রোজ, ফি-মাস
- বদ্ = বদনাম, বদহজম
- বে = বেতার, বেকার
- ব = বনাম, বকলম
- কম্ = কমজোর, কমবখ্ত
মনে রাখার কৌশল
কারখানা তে গিয়ে কিছুর দরদাম না করাই ভালো।
- কারখানা (কার্) তে গিয়ে কিছুর দরদাম (দর্) না (না) করাই ভালো।
নিমি ফিরোজার বান্ধবী।
- নিমি (নিম্) ফিরোজার (ফি) বান্ধবী।
বদস্বভাব আর বেয়াদবি দুটোই তার মধ্যে আছে।
- বদস্বভাব (বদ্) র বেয়াদবি (বে) দুটোই তার মধ্যে আছে।
মিলির বর বোকা কম।
- মিলির বর (বর) বোকা (ব) কম (কম্)
ফরাসি উপসর্গ দিয়ে কিছু বাক্যে
- কারখানা গিয়েছিলে কখন?
- তার অনেক বদমেজাজ।
- ছেলেটা বেকার।
- আজ ইন্ডিয়া বনাম পাকিস্তান এর ম্যাচ আছে।