ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার।আমরা সারা দিন যেসব খাবার খাই তা পরিপাকের পর অধিকাংশই গ্লুকোজ হিসেবে রক্তে মিশে যায়।আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয়ের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নামক যে হরমোন নিসৃত হয়, তা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় রক্ত থেকে চিনি বা গ্লুকোজ গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি বা গ্লুকোজ কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে।শরীরে যখন ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় অথবা ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না কিম্বা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই রক্তের মধ্যে চিনি জমতে শুরু করে এ অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস এর পুরো নাম ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস।।বাংলায় একে বহুমূত্র রোগও বলা হয়।
ডায়াবেটিসে আজীবনের অসংক্রামক রোগ ।বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অশনাক্ত থাকলে বা চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে শরীরের ত্বক নষ্ট হয়ে যায়, চুল পড়ে যায়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ক্ষতির শিকার হতে পারে।সাধারণত ৩ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়।
ডায়াবেটিস টাইপ-১:
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো, যেভাবেই হোক, যাঁদের শরীরে ইনসুলিন নষ্ট হয়ে গেছে, তাঁদের যদি আলাদা করে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে তাঁরা মারাও যেতে পারেন।টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সবাই বুঝতে পারে। হঠাৎ করে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। ওজন কমে যায়।
ডায়াবেটিস টাইপ-২:
টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আমরা যে খাবারই খাই না কেন শরীরে ইনসুলিন ঠিকমত কাজ না করায় রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে থাকে।সমস্যা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের বেলায়। তাঁরা বুঝতেই পারেন না যে তাঁদের ডায়াবেটিস আছে। বারবার প্রস্রাব করা, খাবার খেয়েও ক্ষুধা না মেটা, ক্লান্ত লাগা, ঝিম ধরা ভাব, কোথাও কেটে গেলে বা ঘা হলে সহজে সেটা না শুকানো—এ রকম কিছু লক্ষণ থাকে। যেহেতু তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান না, তাই তিন-চার বছরে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।এক্ষেত্রে দেখা যায় ,চোখে রক্ত জমে বা চোখে খুব কম দেখতে পায় হার্টে ব্লক হতে পারে , যকৃতে ক্রিয়েটিনিন ও বেড়ে যেতে পারে।
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস:
এ ধরনের ডায়াবেটিস গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।এতে বাচ্চার শারীরিক সমস্যা হতে পারে ।তবে এটি গর্ভবতী নারীর জন্য সাময়িক সাধারনত বাচ্চা জন্মানোর পর পরই এটি ভালো হয়ে যায় তবে অনেকের ক্ষেত্রে এটি পরবর্তীতে ডায়াবেটিস টাইপ-২ এ রুপ নেয় এবং তখন এটি বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:
- স্বাভাবিকের চাইতেও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। বিশেষ করে রাতের বেলায়।
- দুর্বল লাগা’ ঘোর ঘোর ভাব আসা
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া ও পিপাসা লাগা
- সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া
- মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
- কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া
- শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা
- চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
- বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
- চোখে কম দেখতে শুরু করা বা দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করা