যারা দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, তাদের বেশির ভাগই ১২ বছর সময়ের মধ্যে মারা গেছেন। বেশির ভাগই মারা গেছেন ওপরের তিনটি কারণে। তিনি আরও দেখতে পেয়েছেন, বেশিক্ষণ বসে থাকার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হওয়া সম্পর্কযুক্ত।
একটানা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য গবেষক পরামর্শ দিয়েছেন যে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা শুয়ে থাকার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কোলন ক্যান্সার এবং অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
হৃদরোগ
দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো আরো সহজেই হার্ট ব্লক করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সাথে উচ্চ রক্তচাপের যোগসূত্র রয়েছে। যারা কম সময় বসে কাটান, তাদের চেয়ে দীর্ঘ সময় বসে কাটানো মানুষের হৃদরোগজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণের বেশি।
যারা দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, তাদের বেশির ভাগই ১২ বছর সময়ের মধ্যে মারা গেছেন। বেশির ভাগই মারা গেছেন ওপরের তিনটি কারণে। তিনি আরও দেখতে পেয়েছেন, বেশিক্ষণ বসে থাকার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হওয়া সম্পর্কযুক্ত।
from Google
গবেষণাগুলো থেকে দেখা যায়, টানা বসে থাকার কারণে কোলন, স্তন এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। ত্বকে এর কারণটি স্পষ্ট নয়। একটি তত্ত্ব হলো, অতিরিক্ত ইনসুলিন কোষের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে। আর একটি হলো, নিয়মিত চলাচলের কারণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো বৃদ্ধি পায় যা ক্ষতিকারক কোষ হত্যা করে।
নরম পেশী
আপনি যখন দাঁড়ান বা সোজা হয়ে বসেন, পেটের পেশী আপনাকে সোজা রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু চেয়ারে সোজা হয়ে না বসলে এই পেশী কোনো কাজে আসে না এবং মেরুদণ্ডের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পায়ের ব্যাধি
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে পায়ে তরল পদার্থ সঞ্চারিত হয়। এর থেকে পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া এবং শিরায় রক্তও জমে যেতে পারে।
নরম হাড়
হাঁটা এবং দৌড়ানোর মতো ক্রিয়াকলাপগুলো দেহের নিম্নাংশের নরম হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। সম্প্রতি অস্টিওপোরোসিস বৃদ্ধির জন্য আংশিকভাবে কার্যকলাপের অভাবকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মস্তিষ্ক
চলন্ত পেশীগুলো মস্তিষ্কের মাধ্যমে তাজা রক্ত এবং অক্সিজেনকে পাম্প করে এবং মস্তিষ্কের সমস্ত প্রকার এবং মেজাজ-বর্ধনকারী রাসায়নিকগুলার ক্রিয়া সচল রাখে। কিন্তু যখন আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকি তখন মস্তিষ্কের সকল ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
ঘাড়
যদি আপনার বেশিরভাগ সময় কাজের জন্য কোনো ডেস্কে বসে থাকতে হয়, এসময় টাইপ করার জন্য আপনার ঘাড় কীবোর্ডের দিকে বা মাথা ফোনের দিকে ঝুঁকে থাকলে তা মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি করে এবং এর ফলে স্থায়ী ভারসাম্যহীনতা হতে পারে।
কাঁধ
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে শুধু ঘাড়ই না, কাঁধেরও ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ট্র্যাপিজিয়াস, যা ঘাড় এবং কাঁধকে সংযুক্ত করে।
কোমর
আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে। সেই সাথে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশে থাকা বিভিন্ন মাংশ পেশি ও লিগামেন্টের ওপর। ডিস্কগুলো নরম হওয়ায় অস্বাভাবিক চাপের কারণে ধীরে ধীরে তা স্ফিত হয়ে মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন নার্ভের ওপর চাপ দেয়। আর এজন্য আমরা ব্যথা অনুভব করি। চাপের তারতম্য বা তীব্রতার ওপর ব্যথার ধরণ নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, ব্যথার তীব্রতাও বেশি হবে, সেই সাথে কোমরে ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে।
বসার সঠিক নিয়ম
আপনার যদি প্রায়ই বসে কাজ করতে হয় তবে এগুলো সঠিকভাবে করার চেষ্টা করুন।
১. সামনের দিকে ঝুঁকে না যাওয়া।
২. কাঁধ শিথিল রাখা
৩. হাত দুই পাশে মিশিয়ে রাখা
৪. কনুই ৯০ ডিগ্রি বক্র রাখা
৫. কোমর সোজা রেখে বসা
৬. পা সমতলে রাখা
৭. প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর উঠে ৩-৫ মিনিট হাঁটা।
শরীরে চর্বি জমে
দীর্ঘ সময় ধরে অফিসের টেবিলে বসে থাকার কারনে শরীরে চর্বি জমতে পারে। একটি সমীক্ষা বলছে যে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকেন এবং যারা অফিসে টেবিলে কাজ করে থাকে,তারাই খুব দ্রুত পেটের চর্বি বাড়ার অভিযোগ করে। এর কারণ,বসে থাকার সময় শারীরিক বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে ক্যালোরি বার্ন কমে যায় এবং বেশিক্ষণ বসে থাকলে আপনার কোমরের চারপাশে চর্বি জমা সহজ হয়ে ওঠে। সকলেরই জানা,অতিরিক্ত চর্বি জমাটা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
ব্লাড সুগার বাড়ে
বিশেষজ্ঞ মতে,দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারনে প্যানক্রিয়াসে উৎপাদিত ইন্সুলিন লেভেলের অসামঞ্জস্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীরের ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। আর সুগার বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার আরো একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলো মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি। যখন কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ সময় বসে থাকেন তখন মস্তিষ্কে রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মনে রাখার ক্ষমতা কমতে থাকে। এমনকি এটি আমাদের অবসাদেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
হৃদরোগজনিত রোগ হতে পারে
টানা বসে থাকলে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। দেহের ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো সহজেই হার্ট ব্লক করতে সক্ষম হয়। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে উচ্চ রক্তচাপেরও। তাই যারা কম সময় বসে কাটান, তাদের হার্টের সমস্যা তুলনামূলক কম। দীর্ঘ সময় বসে কাটানো মানুষের হৃদরোগজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণের বেশি। এমনই দাবি করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পায়ের সমস্যা
টানা বসে থাকলে রক্ত সঞ্চালন বাধা পায়। ফলে গোড়ালি ফুলে ওঠার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী শিরাতেও রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
মস্তিষ্কে সমস্যা
মস্তিষ্কের মাধ্যমে তরতাজা রক্ত ও অক্সিজেনকে পেশীগুলো পাম্প করে। এরফলে মাথার সব ধরণের ক্রিয়া সচল থাকে। কিন্তু অনেকক্ষণ একভাবে বসে থাকলে মস্তিষ্কের সকল ক্রিয়া খুব ধীর মন্থর হয়ে যায়।
মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে
আমরা যখন টানা সময় বসে থাকি, তখন তা মেরুদণ্ডের ওপর চাপ ফেলে। চাপ পড়ে মেরুদন্ডের পাশে থাকা বিভিন্ন মাংসপেশী ও লিগামেন্টের ওপর। একটা সময় মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন নার্ভের ওপর চাপ দেয়। সেই থেকে শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। চাপের তারতম্য বা তীব্রতার ওপর ব্যথার ধরণ নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, ব্যথার তীব্রতাও তত বেশি হবে। সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে কোমরে। একটানা বসে থাকার ফলে আমাদের দেহের নিচের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোতে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হয় না। এতে করে সমস্যা শুরু হয় নানা অঙ্গে।