সাইনাস সংক্রমণ কি?
সাইনাস হল আমাদের করোটির বা মাথার খুলির অন্তরস্থ চার জোড়া ফাঁকা প্রকোষ্ঠ (স্পেস)। এই প্রকোষ্ঠ গুলির স্থান আমাদের কপাল, চোখ, নাক ও গালের নিচে। এরা নাসারন্ধ্রের সাথে সংযুক্ত এবং সাধারণত বাতাসে পূর্ণ থাকে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ভাইরাস সংক্রমণ, ছত্রাক (ফাঙ্গাল) সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির কারনে প্রকোষ্ট গুলির ভিতরের আস্তরণকারী টিস্যুতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। টিস্যু গুলি ফুলে যায়। একেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সাইনোসাইটিস বলে।
সাইনোসাইটিস-এর কারনে সাইনাসের প্রকোষ্ঠ গুলিতে তরল (মিউকাস) পদার্থ জমে এবং প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ মুখে চাপ এবং ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক দিয়ে জল ঝরে। এছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। সাধারন সর্দি-কাশি থেকেও সাইনাসের প্রদাহ হতে পারে। সাইনোসাইটিস-কে অনেক সময় রাইনো-সাইনোসাইটিস-ও বলা হয়।
কারণ নানা রকম
সাইনোসাইটিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর একটি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। সাধারণত নাকের মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ ও ফুলে যাওয়াকেই রাইনাইটিস বলা হয়। এতে নাক ভারী হয়ে যায়, নাকের ভেতরের শিরা (ভেইন), মিউকাস মেমব্রেন ফুলে গিয়ে নাকের ভেতরে ব্লক তৈরি করে। আরও কিছু কারণ—
- ঠান্ডাজনিত সাইনোসাইটিস হতে পারে।
- কারও নাকে যদি মাংস বেড়ে যায়, পলিপ থাকে কিংবা নাকের হাড় বাঁকা থাকে, তাদের সাইনাসের সমস্যা হতে পারে।
- ডিএনএস বা ডিভিয়েটেড ন্যাসাল সেপটামের কারণেও সাইনোসাইটিস হতে পারে।
- টনসিলাইটিস ও এডিনয়েডে সংক্রমণও একটি কারণ।
কয়েক ধরনের সাইনোসাইটিস
- অ্যাকিউট সাইনোসাইটিস: এর উপসর্গগুলো সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ থাকে।
- সাবএকিউট সাইনোসাইটিস: এ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো ৪-১২ সপ্তাহ থাকে।
- ক্রনিক সাইনোসাইটিস: উপসর্গ ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকলে একে ক্রনিক সাইনোসাইটিস বলে।
কাদের হয়
সাইনোসাইটিস কাদের হয়, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। যেকোনো বয়সের মানুষেরই সাইনাসের সমস্যা হতে পারে। তবে যাঁদের সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে বা সাইনাসে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি থাকে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
মাথার সামনের অংশে ব্যথা। মুখে ব্যথা, মাথা ভার ভার অনুভব হওয়া। নাক ভার হয়ে থাকা, কিংবা নাক দিয়ে পানি পড়া, অথবা নাক বন্ধ মনে হওয়া। সর্দি, জ্বর, কাশি হওয়া। গাঢ়, হলদে রঙের ন্যাসাল ডিসচার্জ। ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া। নিশ্বাসের সময় ব্যতিক্রমী ঘ্রাণ পাওয়া। সাইনাসগুলোর ঠিক ওপরেও চাপ চাপ ব্যথা থাকে। খাবারের স্বাদ বা রুচি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় এর সঙ্গে জ্বর, গা মেজমেজ করা। মানসিক অবসাদ।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম—কথাটি সাইনোসাইটিসের ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রযোজ্য। প্রতিরোধের জন্য যা করতে হবে—
- ধুলো–বালি থেকে দূরে থাকুন। ঘন ঘন যেন ঠান্ডা না লেগে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রচুর ভিটামিনযুক্ত খাবার খান। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
- সরাসরি ফ্যানের নিচে বা এসি বরাবর থাকবেন না। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় সতর্ক থাকুন।
- গরম ভাপ বা মেন্থলের ভাপ নিতে পারেন। এর মাধ্যমে দ্রুত শ্লেষ্মা বের হয়ে সাইনাসের সমস্যায় দ্রুত উপশম দেয়।
- ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
- ঠান্ডা খাওয়া যাবে না।
- অ্যারোসোল, মশার কয়েলের ধোঁয়া, এয়ারফ্রেশনারসহ যেকোনো ধরনের ধোঁয়া ও স্প্রে থেকে দূরে থাকুন।
- যাঁদের সাইনাসের সমস্যা আছে, তাঁরা বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
- সাইনাসের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- অনেক সময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা কিংবা ওষুধের মাধ্যমে প্রতিকার না পেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।