ডেঙ্গু জ্বরে ত্বকে লালচে দানা বা র্যাশ ওঠে। তাহলে জ্বরের সঙ্গে র্যাশ মানেই কি ডেঙ্গুর লক্ষণ? তা নয়। বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বরের সঙ্গে র্যাশ খুব সাধারণ একটা সমস্যা। শিশু থেকে বয়স্ক যে কারও নানা কারণে এ রকম হতে পারে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে অনেক ক্ষেত্রে ফুসকুড়িসহ জ্বর একটি গুরুতর শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এ ধরনের উপসর্গগুলো লক্ষ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জ্বর থাকাকালীন একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে মুখ, গলাসহ বুকের ওপরের অংশ লাল হয়ে যেতে পারে।
জ্বরের সঙ্গে ফুসকুড়ির কিছু কারণ
ডেঙ্গু
আমাদের দেশে ডেঙ্গু বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে জ্বরের সঙ্গে মাথা, চোখ, শরীরব্যথা, সারা দেহে ছোট ছোট লালচে দানা বা ছোপ দেখা দিতে পারে। জ্বরের বিভিন্ন সময়ে এই দানা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
প্রথম ধাপের র্যাশ: জ্বর থাকাকালীন একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে মুখ, গলাসহ বুকের ওপরের অংশ লাল হয়ে যেতে পারে। লালচে ভাবটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধানত হাত ও পায়ের পাতায় লালচে দাগের মতো হয়, যেগুলো গুটি আকারেও দেখা দেয়। এগুলোকে ‘ম্যাকুলোপ্যাপুলার র্যাশ’ বলা হয়। এগুলো ধীরে ধীরে শরীরের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ডেঙ্গুর কোন র্যাশ খারাপ: ডেঙ্গুতে অণুচক্রিকা কমে গিয়ে চামড়ার তলায় প্রথমে গাঢ় লাল, তারপর ধীরে ধীরে কালচে হয়ে যাওয়া র্যাশ হলে ধরে নেওয়া হয় হেমোরেজিক ডেঙ্গু। এটি মূলত চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণেই হয়ে থাকে। এ রকম র্যাশ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
হাম
ইদানীং শিশু ছাড়া যেকোনো বয়সেই হাম দেখা যাচ্ছে। কাশি, চোখের লালচে ভাব, সর্দি ইত্যাদি উপসর্গের পাশাপাশি জ্বর শুরুর তিন-চার দিন পর লালচে ছোপ বা লালচে ছোপ, দানাদারসহ মিশ্র র্যাশ দেখা দেয়, যা মাথা ও গলা থেকে শুরু হয়ে শরীর-হাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং চার থেকে ছয় দিন স্থায়ী হতে পারে।
জলবসন্ত
জলবসন্তে জ্বর, মাথা ও শরীরে ব্যথা শুরু হওয়ার এক থেকে দুই দিন পর ফুসকুড়ি বা দানা দেখা যায়, কয়েকটি তরলে পূর্ণ থাকে। চুলকানি থাকতে পারে। সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ফুসকুড়িগুলো শুকিয়ে যায়।
টাইফয়েড
এই রোগে প্রথম চার-পাঁচ দিন পর জ্বরের তীব্রতা ক্রমে বাড়তে থাকে, সঙ্গে পেটব্যথা, ডায়রিয়া ও বমি হয়। জ্বরের ৭ থেকে ১০ দিন পর পেটে ও পিঠে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
অনেক ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে শিশু আর বয়স্কদের জ্বর ও ফুসকুড়ি হতে পারে। উদাহরণের মধ্যে রয়েছে হাম, রুবেলা, চিকেন পক্স (ভেরিসেলা), রোসোলা, স্কারলেট জ্বর ইত্যাদি।
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
গরমে অ্যালার্জির কারণে কখনো কখনো জ্বর ও ফুসকুড়ি হতে পারে। কখনো কখনো ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় জ্বরের ভাবের সঙ্গেও ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
সেলুলাইটিস
এটি একটি ত্বকের জীবাণুর সংক্রমণ, যাতে দেখা যায় লাল ভাব, উষ্ণতা, ফোলাভাব ও জ্বর। ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি হয়ে থাকে।
এ ছাড়া বেশ কিছু জটিল রোগে র্যাশসহ জ্বর হতে পারে। যেমন: মেনিনজাইটিস, ভাসকুলাইটিস, একজিমা, এসএলই, আইটিপি, টক্সিক শক সিনড্রোম, লিউকোমিয়া ইত্যাদি।