প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান, যার অভাবে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই, শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন পাচ্ছে কি না, এ বিষয়ে খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে অনেক সময় শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা দিতে পারে, যা সহজে বুঝে ওঠা যায় না। যখন এই অভাব প্রকট হয়ে ওঠে, তখন বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। কিছু লোকের কর্মশক্তি হ্রাস পায়, অন্যদের বিপাক হার দুর্বল হয়, বা শরীরে ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদনে সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-
সর্বদা ক্ষুধা ভাব: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। তবে, শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাব হলে খিদে লাগা স্বাভাবিক বিষয়। বারবার খিদে পাওয়া প্রোটিনের অভাবের একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রোটিনের অভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। সঠিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে, ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় ডাল, মাছ, ডিম, বাদামসহ প্রোটিনে পূর্ণ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
চুল ঝরলে: শুধু শরীর সুস্থ রাখার জন্য নয়, সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্যও প্রোটিন অপরিহার্য। প্রোটিনের অভাবে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে এবং চুল পড়ার সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে।
ক্ষত শুকাতে দেরি হলে: প্রোটিন ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। তবে, যদি দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ক্ষত শুকোতে না পারে, তাহলে এটি শরীরে প্রোটিনের অভাবের একটি সংকেত হতে পারে।
ক্লান্তি ভাব: প্রোটিন শরীরকে উদ্যমী ও প্রাণবন্ত রাখতে সহায়তা করে। যদি শরীরে প্রোটিনের অভাব থাকে, তাহলে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। যদি রাতে ভালো ঘুমানোর পরেও কাজ করার সময় ক্লান্তি বোধ করেন, তাহলে এটি প্রোটিনের অভাবের একটি সংকেত হতে পারে।
প্রোটিনের উৎস দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। প্রথমত, প্রাণিজ প্রোটিন যেমন—মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি, এবং দ্বিতীয়ত, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যেমন—ডাল (মসুর, ছোলা, মুগ, কলাই ইত্যাদি) এবং বীচি (শিম, বরবটি, কুমড়ার বীচি, কাঁঠালের বীচি ইত্যাদি)।
যে খাবারগুলো পরিপূর্ণ প্রোটিন যোগাবে-
প্রোটিনের প্রকারভেদ সাধারণত অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি ও পরিমাণের ভিত্তিতে করা হয়। সম্পূর্ণ প্রোটিন এবং অসম্পূর্ণ প্রোটিন এই দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। উল্লেখযোগ্যভাবে, সব প্রাণিজ প্রোটিন সম্পূর্ণ প্রোটিন হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের শরীরের সঠিক বৃদ্ধি ও গঠনের জন্য প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি প্রোটিন ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে গঠিত, যা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে।
প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রতিটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে সেই নয়টি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিডই থাকে। এসব খাবারের মধ্যে মাছ, মুরগি, ডিম, গরুর মাংস, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য উল্লেখযোগ্য।
প্রাণিজ উৎস ছাড়াও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পরিপূর্ণ প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আপনাকে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে—’তেমপে’, ‘মিসো’, ‘টফু’, ‘কিনোয়া’, ‘এডামেম’, ‘হেম্প সিডস’, ‘চিয়া সিডস’, ‘স্পিরুলিনা’, ‘বাকহুইট’ ইত্যাদি।
উদ্ভিজ্জ অসম্পূর্ণ প্রোটিনের উৎসের মধ্যে রয়েছে বাদাম, বীজ, সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার, ডাল, মটর, সীম ইত্যাদি। যদিও এসব খাবারে নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিডের সবগুলো না থাকলেও, তাদের স্বাস্থ্যগুণ কম নয়। Healthx BD
আরও জানুন-