দুশ্চিন্তা শব্দটা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রায় সবারই কোন না কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা লেগেই থাকে। দুশ্চিন্তা জিনিসটা আমাদের জন্য সত্যিই খারাপ। এই দুশ্চিন্তা যতোটা না মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে ততোটাই শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে।
অতীতের কোনো ঘটনা নিয়ে আক্ষেপ, ওমনটা না করে এমনটা করলে কেমন হত কিংবা পূর্বের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও হিসেব কষে যাওয়াকেই এক কথায় অতিচিন্তা কিংবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ এই কাজ করে থাকেন। ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা কমে আসে ৫২ শতাংশে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের করা এক গবেষণা অনুযায়ী,
মজার ব্যাপার হলো এদের অনেকেই মনে করেন অতীত হাতড়ে বেড়ানোর মাধ্যমে তারা নিজের জন্য ভালো কিছু করছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটা উল্টো।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ার’য়ের ‘সেন্টার ফর স্ট্রেস অ্যান্ড হেলথ’ বিভাগের পরিচালক ডেভিড স্পিগেইল বলেন, “অনেকসময় একটি সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার ক্ষতি খোদ ওই সমস্যার কারণে হওয়া ক্ষতির মাত্রাকে ছাপিয়ে যায়।”
অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে শরীরে নানান প্রভাব পড়ে।
আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলে
শুরুতেই যদি ধরে নেন আপনাকে দিয়ে হবে না, তাহলে পুরো বিষয়টি আপনার জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াবে। এতে আপনার পুরো কর্মপরিকল্পনাই হতে পারে বরবাদ। তাই কী হবে না হবে, সবকিছু ঝেড়ে ফেলে কাজটা সঠিকভাবে করুন।
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা
মানসিক বিপত্তি ছাড়াও দেখা দেয় শারীরিক সমস্যা। খিদে না লাগা থেকে শুরু করে ঘুম কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বহুমূত্র এমনকি হৃদ্রোগও দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। অনেকেরই ‘টেনশন হেডেক’ বা অতিরিক্ত মাথাব্যথা দেখা দেয়। ফলে ঘাড় ও চোখের ব্যথাও হতে পারে।
মানসিক সমস্যা
খিটখিটে মেজাজ, হতাশা, উৎসাহ হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে অল্পতেই রেগে যাওয়া, সহজেই ভুলে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন অসামাজিক আচরণ দেখা দেয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে আগে যেসব বিষয় সহজেই গুছিয়ে নিতে পারতেন, সেটা আর কিছুতেই পারবেন না। উল্টা সবার সামনে সহজেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। এটা কিন্তু আপনার পরিবার ও কর্মক্ষেত্র—দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর।
সঠিকভাবে কাজ করায় বাধা
যদি শুরুতেই ধরে নেন যে কাজটি আপনাকে দিয়ে হবে না, কিংবা আপনি পারবেন না, তাহলে সঠিকভাবে কাজ করার উদ্দীপনাই নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাঘাত ঘটে স্বাভাবিক জীবনযাপনে।
অল্পতেই ভেঙে পড়া
বেঁচে থাকার জন্য নিত্যদিন সংগ্রাম করতে হয়। আর আপনি যদি কোনো কিছুতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সাহসের সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রবণতাই নষ্ট হয়ে যাবে, যা আপনার ব্যক্তিত্বের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কর্মশক্তি হ্রাস:
চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা, দুটোতেই মস্তিষ্কের উপর দিয়ে ধকল যায়, খরচ হয় কর্মশক্তি।
খাওয়া রুচি:
মানুষ ভেদে এক্ষেত্রে প্রভাব ভিন্ন। দুশ্চিন্তায় কারও খাওয়া বন্ধ হয়, কারও আবার লাগামহীন হয়ে যায়। খাওয়ার ব্যাপারটা দুশ্চিন্তা থেকে সামান্য অন্যমনস্ক করে যা স্বস্তিদায়ক। আর এসময় মানুষ বেছে নেয় সবচাইতে সুস্বাদু কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবারটাই। প্রক্রিয়াজাত চর্বি, চিনি ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর উপাদানে ভরপুর খাবারগুলো ‘কমফোর্ট ফুড’ হিসেবে হয়ত একারণেই খ্যাত।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার অন্যতম একটি সমস্যা হলো, কোনো ব্যক্তির ওপর সব রাগ বা দোষারোপ করা। এতে কিন্তু দূরত্বের সৃষ্টি হবে। তাই এ ধরনের আচরণ থেকে বেরিয়ে আসুন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেকেই কিছুটা সময় দিন। নিজের সমস্যা চিহ্নিত করুন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আপনাকেই।
১.দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হলো ইতিবাচক চিন্তা বা পজিটিভ থিংকিং। সবচেয়ে ভালো হয় এমন মনোভাব রাখা যে, যা হবে দেখা যাবে। কারণ আপনি কাজটা করে ফেলেছেন। এখন যদি সেই কাজের ফলাফল নিয়ে দিনরাত দুশ্চিন্তা করে মাথার চুল সাদা করে ফেললেন তাহলে এতে কোনো লাভ তো নেই-ই উল্টো ক্ষতি হচ্ছে। তাই কাজের ফলাফলের ক্ষেত্রে যারা অসন্তোষে ভোগেন তাদের উচিৎ “যা হবে দেখা যাবে এমন মনোভাব প্রকাশ করা”।
২.” সবসময় ভালো হতেই হবে” এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। ভালো খারাপ নিয়েই তো জীবন। তাই জীবনের প্রতিটি ধাপে দেখা মিলবে ভালো খারাপ উভয়ের সাথেই। আপনার কাজের ফলাফল খারাপ হলে ‘লোকে কি ভাববে’ এটাও যদি আপনি ভাবেন তাহলে লোকে কি ভাববে? লোককে তাদের মতো ভাবতে দিন না, লোক আপনার রক্ত সম্পর্কের তো কেউ না। শুধু শুধু কেন তাদের কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিবেন।
৩.সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন। তার উপর ফলাফলের ভার চাপিয়ে দিন, বাকিটা তিনি দেখে নেবেন।
৪.আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। কথায় কথায় রাগ হবেন না। আবার কথায় কথায় কাঁদবেনও না। নিজের একটা ব্যাক্তিত্ব ধরে রাখুন।
৫.নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। ফিটনেস বজায় রাখুন।
দুশ্চিন্তা ছেড়ে দিন। অযথা দুশ্চিন্তা করলে ফলাফল কখনো ভালো হয় না। নিজের জন্য সময় রাখুন। অবসরে প্রিয় পোষা প্রাণীদের সাথে সময় কাটান। দেখবেন ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।