ডাক্তার বা রেডিওলজিস্টের পক্ষে নিখুঁতভাবে জটিল রোগের সার্বিক চিত্র পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে এবার এমন সব ‘সেলফ লার্নিং সফটওয়্যার’ তৈরি করা হচ্ছে, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে পারে। বিশেষ করে জটিল রোগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে চিকিৎসাবিদ্যায় হাইটেক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে।
এবার এমন এক অ্যাপ আসতে চলেছে, যেটিকে প্রশ্ন করলে কারও সংক্রমণ আছে কিনা, তা চটজলদি জানিয়ে দেবে৷ এমন দ্রুত অডিও টেস্ট মূল পরীক্ষার বিকল্প হতে না পারলেও ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নিখুঁত হতে পারে৷ বর্তমানে যত বেশি সম্ভব মানুষের কণ্ঠ ধারণ করে সেই সফটওয়্যার অনুশীলনের কাজ চলছে৷ কাশি ও হাসির সময়ে ফুসফুসের উপর কতটা চাপ পড়ে, তা পরিমাপ করা যায়৷ সিগনাল প্রসেসিং অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে আমরা সেটা করা সম্ভব৷ সংগৃহিত তথ্যের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অনুশীলন করানো যায়৷ করোনা পরীক্ষায় যাদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বা পড়ে নি অথবা যাদের করোনার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের কণ্ঠ শুনে সফটওয়্যার শনাক্ত করতে পারবে৷
এই সফটওয়্যারের নেপথ্যে ‘মেশিন লার্নিং’ প্রযুক্তি কাজ করে। এক অ্যালগরিদম বিশাল পরিমাণ তথ্যের মেলবন্ধন ঘটায়। সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে এক কম্পিউটার মস্তিষ্কের মাল্টিপল স্কলেরোসিস অথবা ডিমেনশিয়া শনাক্ত করতে পারে। যত বেশি ও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে, ফলাফলও তত নিখুঁত হবে। বার্লিনের এক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এমন এআই প্রোগ্রাম করেছে, যা এমনকি কোনো ডাক্তারের তুলনায়ও বেশি দক্ষ। আন্দ্রেয়াস লেমকে বলেন, ‘প্রক্রিয়ার প্রত্যেকটি অংশ আমরা আরও বেশি করে স্বয়ংক্রিয় করে তুলছি। আরও বেশি সফটওয়্যার সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তথ্য বিশ্লেষণ করছে। সবশেষে রেডিওলজিস্ট শুধু সফটওয়্যারের নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পরীক্ষা করবেন। বাকি কাজ সফটওয়্যার করে দেবে।
’ কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রেও এমন সফটওয়্যার কাজে লাগানো হচ্ছে, যেগুলো সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষা গ্রহণ করছে। যেমন বড় আকারে করোনা পরীক্ষার সময় এ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে। এবার এমন এক অ্যাপ আসতে চলেছে, যেটিকে প্রশ্ন করলে কারও সংক্রমণ আছে কি না, তা চটজলদি জানিয়ে দেবে। এমন দ্রুত অডিও টেস্ট মূল পরীক্ষার বিকল্প হতে না পারলেও ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নিখুঁত হতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুবই দক্ষতার সঙ্গে ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করতে পারে। ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করা ছাড়াও মেডিকেল ইমেজিং রেডিওগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি, নিউক্লিয়ার মেডিসিন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। ক্যান্সার চিকিৎসায়, সার্জারি, ব্রাকিথেরাপিত তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বসাতে এখন রোবটিক হাত ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাস¤পন্ন এসব রোবটিক হাত ক¤িপউটার প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের শরীর রোগমুক্ত রাখার জন্য জিনোম বিশ্লেষণ করে ত্রুটিযুক্ত জিন সংশোধন করা হবে। সে ক্ষেত্রে কোটি কোটি ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব নেবে কৃত্রিম বুদ্ধির কোনো স্মার্ট রোবট।
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিস্তারিত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। ডাক্তাররা সেই ছবি বিশ্লেষণ করে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পান। মেডিএয়ার কোম্পানির পরিচালক আন্দ্রেয়াস লেমকে বলেন, ‘আজকাল সেই সব ছবি বিশ্লেষণ করার জন্য রেডিওলজিস্টের হাতে খুব কম সময় থাকে। প্রত্যেক রোগীর জন্য বড়জোর ১০ মিনিট। অথচ তাকে ২০০ থেকে ৪০০ ছবি দেখতে হয়। অর্থাৎ নিছক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি ছবিগুলোর ওপর চোখ বোলাতে পারেন। অন্যদিকে আমাদের সফটওয়্যার প্রতিটি ছবির প্রতিটি পিক্সেল বিশ্লেষণ করে এবং মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কাঠামোর অবস্থা তুলে ধরে।’