বাসস্থান স্বাস্থ্যের একটি সামাজিক নির্ধারক। সম্ভাব্য বিপদ থেকে দূরে অবস্থিত একটি নিরাপদ আবাসন সুস্থতার বড় সহায়ক হতে পারে। তবে, অনিরাপদ বা অনুপযুক্ত আবাসন পরিস্থিতিতে বসবাস স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য অবদান রাখতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
লোকেরা তাদের প্রায় ৯০% সময় ঘরে কাটায়, যা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উপর আবাসনের সম্ভাব্য প্রভাবের উপর জোর দেয়। এছাড়াও, গবেষণা পরামর্শ দেয় যে আবাসন সহ স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারকগুলি একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার উপরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই লেখায়, আমরা আলোচনা করব যে কিভাবে আবাসন একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সেই সাথে কিছু বিষয় যা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
কেন আবাসন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে?
আবাসন গুণমান একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। আবাসন গুণমান সাধারণত শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি বাড়ির অবস্থানের সামাজিক এবং শারীরিক পরিবেশের গুণমানকে বোঝায়।
আবাসনের গুণমান নির্ধারণ করতে পারে এমন কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বায়ুর গুণমান, বাড়ির নিরাপত্তা, ব্যক্তি প্রতি নির্ধারিত স্থান, এবং সম্ভাব্য রাসায়নিক পদার্থ সমূহের বিরক্তিকর উপস্থিতি, যেমন সীসা।
নিম্ন মানের বাড়ির সরঞ্জাম এবং সিস্টেম, যেমন গরম, অপরিকল্পিত পানির লাইন এবং এয়ার কন্ডিশনার, কার্বন মনোক্সাইড, সীসা এবং বায়ুবাহিত অসুস্থতার সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সাধারণত, নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকেরা দরিদ্র মানের আবাসনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যা তাদের স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় থাকেন, তাহলে তারা দরিদ্র মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, এবং সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
উপরন্তু, কিছু লোকের কিছু সিস্টেম এবং যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা এবং গুণমান উন্নত করার উপায় নাও থাকতে পারে। ফলস্বরূপ, তারা পর্যাপ্তভাবে তাদের ঘর গরম বা ঠান্ডা করতে সক্ষম নাও হতে পারে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
অধিকন্তু, নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকদের বাড়িগুলি বিভিন্ন ধরণের ক্ষতির জন্য বেশি সংবেদনশীল হতে পারে যা মেরামত না করা হলে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পানির লাইনে ছিদ্র থাকলে ফাঙ্গাসের বিকাশ বৃদ্ধি হতে পারে, যা শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
আবাসন এবং স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এমন মূল কারণগুলি
এমন অনেকগুলি মূল কারণ রয়েছে যা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উপর আবাসনের প্রভাবকে আকার দিতে পারে। তারা হল:
১) গুণমান এবং নিরাপত্তাঃ নিম্নমানের আবাসন এবং নিরাপত্তা মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। বাড়িতে সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকিগুলি সাধারণত চারটি বিভাগে পড়ে:
- জৈবিক: এর মধ্যে রয়েছে ফাঙ্গাস এবং ধুলোকনা যা থেকে অ্যালার্জি, হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- রাসায়নিক: এর মধ্যে সীসা, অ্যাসবেস্টস, রেডন এবং কার্বন মনোক্সাইড অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এগুলোর সংস্পর্শে স্নায়বিক জটিলতা, বিকাশজনিত ব্যাধি, ক্যান্সার, হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- শারীরিক: উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে অনুপযুক্ত বায়ুচলাচল, এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। এগুলি শারীরিক আঘাত, শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, হাঁপানি এবং অতিরিক্ত তাপ বা ঠান্ডার সংস্পর্শে অবদান রাখতে পারে।
- সামাজিক: এতে অতিরিক্ত ভিড়, দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস এবং অপরাধের ভয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সামাজিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সংক্রামক রোগের ঝুঁকি এবং খারাপ মানসিক স্বাস্থ্যের ফলাফল বাড়াতে পারে।
২) ক্রয়ক্ষমতাঃ নিরাপদ, সাশ্রয়ী, ভাল মানের আবাসনের অধিগম্যতা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে উচ্চ আবাসন খরচ, বড় ধরনের ত্যাগের কারণ হতে পারে যা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি আবাসন ক্রয়ক্ষমতার অযোগ্য হয়, তাহলে মানুষ হয়তো পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পরিদর্শন এবং বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির জন্য অর্থ প্রদান করতে সক্ষম হবে না যা ভাল স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে।
৩) প্রতিবেশীঃ সাধারণত, নিম্ন আয়ের প্রতিবেশী এলাকায় কম সুবিধা থাকবে। ফলস্বরূপ, এই বাসিন্দাদের পরিবহন, চাকরি এবং ভাল মানের স্কুলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
তারা পরিবেশগত দিক দিয়ে খোলামেলা এবং একটি বৃহত্তর ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের কম সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর ফলে উচ্চ অপরাধের হার দেখা যায়।
অন্যান্য গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংখ্যালঘুরা যাদের সাধারণত নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান রয়েছে তাদের বৈষম্যমূলক আবাসন নীতির দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে প্রায়শই নিম্ন আয়ের এলাকায় বসবাস করে।
৪) স্থিতিশীলতাঃ গুণমান, নিরাপত্তা, ক্রয়ক্ষমতা, এবং আশেপাশের এলাকা সবই আবাসনের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভাল আবাসন এবং পর্যাপ্ত সহায়তা ছাড়া, লোকেরা আবাসন অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হওয়ার এবং এমনকি গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
গৃহহীনতার সম্মুখীন ব্যক্তির মধ্যে দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য, সংক্রামক রোগ, সহিংসতা এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের ঝুঁকি রয়েছে৷
আবাসন একজন ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা খারাপ মানের আবাসনকে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক স্বাস্থ্যের ফলাফলের সাথে যুক্ত করেন।
অনেক কারণ আবাসনের উপযুক্ততাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাই সরাসরি একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রয়ক্ষমতা, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অবস্থান।
স্বাস্থ্যগত বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। এই কারণেই স্বাস্থ্যের সমতাকে উন্নীত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা জনস্বাস্থ্যকে উপকৃত করে আবাসনের গুণমান এবং প্রাপ্যতা উভয়ই উন্নত করতে পারে।
Keywords: বাসস্থান, স্বাস্থ্য, সঙ্ক্রামক, ফাঙ্গাস, বৈষম্য, ঘনবসতি, নিরাপত্তা, দুর্বল, প্রতিবেশী, পরিবেশ, আবাসন, ক্রয়ক্ষমতা