ডেঙ্গু দিন দিন আক্রমণাত্মক হচ্ছে, দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা।বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্যানুযায়ী ডেঙ্গু হচ্ছে ফ্লাভিভাইরাস গোত্রের একটি ভাইরাস, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাসের মোট চার প্রকার বা চার রকম সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলোর একটিতে সংক্রমিত হলে সেটির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধক্ষমতা জন্মালেও অন্য সেরোটাইপগুলো দিয়ে পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।বিশেষজ্ঞদের মতে চার প্রকার সেরোটাইপের ভেতর ২ আর ৩ নম্বর মস্তিষ্কের প্রদাহের জন্য বেশি দায়ী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের সাধারনত কয়েকটি ধাপ আছে। কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য ঠান্ডা জ্বরেই এটি সেরে যায়, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক রক্তপাত বা অন্যান্য অঙ্গের জটিলতার মতো প্রাণসংহারক পরিস্থিতি তৈরি করে। ডেঙ্গুজনিত মস্তিষ্কের প্রদাহ মারাত্মক ডেঙ্গু সংক্রমণের একটি লক্ষণ এবং জটিলতা। ডেঙ্গু ভাইরাস মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস, মেনিনজাইটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের মস্তিষ্কের যেকোনো অংশই ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গুতে মস্তিষ্কের সাধারণ প্রদাহ প্রায়ই হয় কিন্তু ডেঙ্গু এনসেফালাইটিসের হার খুব বেশি নয়। এটি খুব মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে ডেঙ্গু এনসেফালাইটিসে রোগীর ডেঙ্গুর স্বাভাবিক উপসর্গগুলোর পাশাপাশি প্রচণ্ড মাথাব্যথা, কখনো কখনো অসংলগ্ন আচরণ, অজ্ঞান বা অজ্ঞানের মতো হওয়া, খিঁচুনি ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। রক্তে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার পাশাপাশি সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড সংগ্রহ করে তাতে ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা, প্রয়োজনে পিসিআর, ইইজি, সিটিস্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু এ ধরনের উপসর্গ সেরেব্রাল ম্যালেরিয়া, জাপানিজ এনসেফালাইটিস ইত্যাদি রোগেও থাকে, তাই ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় বেশ জরুরি।
যেহেতু ডেঙ্গু রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই তাই পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু এনসেফালাইটিসের নিশ্চিত হওয়া গেলেও এরও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎকরা এর কিছু সহায়ক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, যেমন প্রচুর তরল, জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ, খিঁচুনি থাকলে নিবারণে কিছু ওষুধ এবং উপসর্গ অনুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। ডেঙ্গু এনসেফালাইটিস তুলনামূলকভাবে বিরল হলেও এটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং জীবনঘাতী হতে পারে। তাই ডেঙ্গু সংক্রমণ হলে বা কয়েক দিনের জ্বরে আচরণের অসংলগ্নতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। দরকার হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা পেলে অনেক রোগীই এই মারাত্মক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।