বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় স্বাস্থ্যসেবা র্যাঙ্কিং। এই র্যাঙ্কিং বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা সেবার গুণগত মান, চিকিৎসকদের দক্ষতা, চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন, রোগ নির্ণয়ের গতি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে।
এই র্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে রোগী এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতে পারেন কোন দেশে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে এবং কোন দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল।

৯৮ টি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার 2025 সালের র্যাঙ্কিং এখানে দেখুন
শীর্ষ তিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা: এশিয়ার আধিপত্য

২০২৫ সালের স্বাস্থ্যসেবা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনটি স্থান দখল করেছে এশিয়ার দেশগুলো।
- তাইওয়ান (১৫৮.২ পয়েন্ট) – তাইওয়ানের স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত, যা নাগরিকদের কম খরচে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সরকারী বিনিয়োগের কারণে এটি বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাগুলোর একটি।
- দক্ষিণ কোরিয়া (১৫১.৩ পয়েন্ট) – চিকিৎসা প্রযুক্তিতে উচ্চ বিনিয়োগের কারণে কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশ্বমানের। দেশটিতে গড় আয়ু বেশি এবং শিশু মৃত্যুর হার অত্যন্ত কম।
- জাপান (১৪৪.৫ পয়েন্ট) – জাপান তার উচ্চ-প্রযুক্তির চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং উদ্ভাবনী চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত। তবে, দেশটিতে দীর্ঘায়ু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পেনশন ব্যবস্থা চাপে পড়েছে এবং সরকারকে নিয়মিত কর বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।
ইউরোপের শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
৪র্থ স্থান থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলো শীর্ষে রয়েছে:
- ৪র্থ স্থান থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলো শীর্ষে রয়েছে:
- নেদারল্যান্ডস (১৪৪.৩ পয়েন্ট) – বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থা এবং প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এটি অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
- এস্তোনিয়া (১৪০.১ পয়েন্ট) – ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা বা “ই-হেলথ” ব্যবস্থা চালু করে অত্যন্ত উন্নত সেবা প্রদান করছে।
- ফ্রান্স (১৪২.৮ পয়েন্ট) – ফ্রান্সের স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, যেখানে উচ্চমানের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাপক চিকিৎসা গবেষণা এবং সহজলভ্য চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে।
- ফিনল্যান্ড (১৪০.৯ পয়েন্ট) – ফিনল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা এবং উন্নত হাসপাতাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নাগরিকদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।
- স্পেন (১৪২.৬ পয়েন্ট) –বিশেষত, স্পেন শুধু উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেয় না, বরং বসবাসের জন্যও চমৎকার পরিবেশ তৈরি করেছে। অভিবাসীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বাসস্থান অনুমতির সুবিধা রয়েছে, যার ফলে উন্নত চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য হয়।
বিশেষত, স্পেন শুধু উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেয় না, বরং বসবাসের জন্যও চমৎকার পরিবেশ তৈরি করেছে। অভিবাসীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বাসস্থান অনুমতির সুবিধা রয়েছে, যার ফলে উন্নত চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য হয়।
সবচেয়ে খারাপ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা

বিশ্বের সবচেয়ে বাজে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে ভেনেজুয়েলায় (৬৭.৮ পয়েন্ট)। দেশটি বর্তমানে মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব এবং দক্ষ চিকিৎসকের দেশত্যাগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে (৭২.৪ পয়েন্ট)।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতির চেষ্টা থাকলেও হাসপাতাল ও দক্ষ চিকিৎসকের সংকট এখনো রয়ে গেছে। দরিদ্রতা, অপুষ্টি এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অনেক রোগের সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব হয় না। টিকাদান কর্মসূচি বাড়ানো এবং জনগণের পুষ্টি উন্নত করার জন্য সরকারের আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।
মরক্কো (৭৭ পয়েন্ট), ইরাক (৭৮ পয়েন্ট), মিশর (৮১.৭ পয়েন্ট), আজারবাইজান (৮২.৯ পয়েন্ট), নাইজেরিয়া (৮৪.২ পয়েন্ট), বেলারুশ (৮৪.৭ পয়েন্ট), আলবেনিয়া (৮৬.১ পয়েন্ট) এবং মাল্টা (৯০.৮ পয়েন্ট) দেশগুলোর অবস্থাও বেশ খারাপ।
বাংলাদেশসহ এসব দেশের জন্য জরুরি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে নাগরিকদের জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়।