আজকের ডিজিটাল যুগে, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যোগাযোগ, বিনোদন, তথ্য, শিক্ষা—সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের যে ক্ষতি হয়, এই ক্ষতি থেকে চোখকে বাঁচানোর কিছু কার্যকরী উপায় আমরা জানব:
মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারে চোখের যেসব সমস্যা হতে পারে:
- কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম: দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের পেশী ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে ঝাপসা দেখা, চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, এবং চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
- চোখ শুকিয়ে যাওয়া : সাধারণত, আমরা প্রতি মিনিটে ১৫-২০ বার চোখের পলক ফেলি। কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনে মনোযোগ দেওয়ার সময় এই হার কমে যায়, ফলে চোখ শুকিয়ে যায় এবং অস্বস্তি বোধ হয়।
- মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি: শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মায়োপিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখা গেলেও দূরের জিনিস ঝাপসা লাগে এই সমস্যায়।
- নীল আলো এর ক্ষতিকর প্রভাব: মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো চোখের রেটিনার ক্ষতি করতে পারে এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া: একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ফোকাস করার ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
- চোখে ব্যথা ও জ্বালা: দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারের ফলে চোখের পেশী ক্লান্ত হয়ে যায়, যার ফলে চোখে ব্যথা ও জ্বালা অনুভব হতে পারে।

কিভাবে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চোখকে বাঁচাবেন?
- ২০-২০-২০ নিয়ম: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। প্রতি ২০ মিনিট মোবাইল ব্যবহারের পর, ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকান। এতে চোখের পেশী বিশ্রাম পাবে এবং চোখের ফোকাস করার ক্ষমতা বজায় থাকবে।
- নিয়মিত চোখের পলক ফেলা: মোবাইলের স্ক্রিনে মনোযোগ দেওয়ার সময় চোখের পলক ফেলার কথা মনে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর চোখের পলক ফেললে চোখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখা: মোবাইলের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখুন। অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা চোখের জন্য ক্ষতিকর।
- ফন্টের আকার বৃদ্ধি: ছোট ফন্টের কারণে চোখে বেশি চাপ পড়ে। তাই ফন্টের আকার বাড়িয়ে দিন যাতে পড়তে সুবিধা হয়।
- নীল আলো ফিল্টার ব্যবহার: মোবাইলে থাকা ব্লু লাইট ফিল্টার অপশনটি চালু করুন অথবা ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ ব্যবহার করুন। এটি নীল আলোর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।
- সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা: মোবাইল এবং চোখের মধ্যে কমপক্ষে ১২-১৬ ইঞ্চি দূরত্ব বজায় রাখুন। খুব কাছ থেকে মোবাইল ব্যবহার করলে চোখের উপর বেশি চাপ পড়ে।
- পর্যাপ্ত আলোতে ব্যবহার: কম আলোতে বা অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত আলোতে মোবাইল ব্যবহার করলে চোখের উপর চাপ কম পড়ে।
- নিয়মিত চোখের ব্যায়াম: কিছু সাধারণ চোখের ব্যায়াম চোখের পেশীকে শক্তিশালী করতে এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। যেমন – চোখের পাতা ফেলা, চোখের মণি ঘোরানো, দূরের ও কাছের বস্তুর দিকে পর্যায়ক্রমে তাকানো ইত্যাদি।
- কম্পিউটার গ্লাস ব্যবহার: যারা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করেন, তারা অ্যান্টি-গ্লেয়ার কম্পিউটার গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। এটি স্ক্রিনের আলো থেকে চোখকে রক্ষা করে।
- নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা: বছরে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখের পরীক্ষা করানো উচিত। এর মাধ্যমে চোখের কোনো সমস্যা থাকলে তা আগে থেকেই ধরা পড়বে এবং সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার, এবং নিয়মিত ব্যায়াম চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চোখের ব্যায়াম:
- ফোকাস পরিবর্তন : প্রথমে কাছে কোনো বস্তুর দিকে তাকান, তারপর দূরে কোনো বস্তুর দিকে তাকান। কয়েকবার এটি করুন।
- চোখের ঘূর্ণন : প্রথমে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং পরে ঘড়ির বিপরীত দিকে চোখ ঘোরান।
- পাশের দিকে তাকানো: প্রথমে ডানে এবং পরে বামে তাকান।
- উপর-নীচ তাকানো : প্রথমে উপরে এবং পরে নীচে তাকান।

খাবার যা চোখের জন্য উপকারী:
- গাজর : ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা চোখের জন্য খুবই উপকারী।
- পালং শাক : লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন সমৃদ্ধ, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
- ডিম : লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ।
- মাছ : ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা চোখের জন্য উপকারী।
- বাদাম ও বীজ : ভিটামিন ই সমৃদ্ধ।
- সাইট্রাস ফল : ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
অতিরিক্ত টিপস:
- মোবাইল ব্যবহারের সময় বসার ভঙ্গি সঠিক রাখুন।
- একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
- শিশুদের হাতে অতিরিক্ত মোবাইল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- চোখে কোনো সমস্যা অনুভব করলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।Healthx BD
আরও জানুন-
মাথা নিয়ে মাথাব্যথা!
শরীরের ইমিউনিটি বাড়ুক ন্যাচারালি
প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা নিয়ে কিছু কথা
চোখের জটিল রোগ ‘অপটিক নিউরাইটিস’
1 Comment
Thanks for making awareness.