আতঙ্ক নয়, ডেঙ্গুতে চাই সচেতনতা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ০১,অক্টোবর,২০২২ এর তথ্য অনু্যায়ী , গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৬৩৫ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা এবছর একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তির ঘটনা। এর মধ্যে ঢাকায় ৫১৮ এবং ঢাকার বাহিরে সারাদেশে ১১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ

– ১০১ – ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর যা ১০৫ পর্যন্ত ও থাকতে পারে।

– জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে।

– শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে।

তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে

ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে –

১। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার

২। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার।

ক্লাসিক্যাল ডেংগু জ্বরের লক্ষণসমূহ :

-ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও কখনও কখনও ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে।

-শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।

-এছাড়াও মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।

-রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও রুচি কমে যায়।

এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’।

জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র‍্যাশ। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর এর লক্ষণসমূহ :

রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।

যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।

এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। যার লক্ষণঃ

-রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।

-পালস অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।

-শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।

-প্রস্রাব কমে যাওয়।

-হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

কিছু লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-

-তীব্র জ্বর ও শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলে।

-শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।

-প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।

-শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।

-প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।

-জন্ডিস দেখা দিলে।

-অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।

-প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।

ঘরে চিকিৎসা নিতে করণীয়-

-পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ) নিতে হবে।

-স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাবেন। যেমন- খাবার স্যালাইন, টাটকা ফলের রস ইত্যাদি।

-এ ছাড়াও গ্লূকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি স্যুপ ইত্যাদি।

তবে বলে রাখা ভালো, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪টি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।

প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন ৪ গ্রাম। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে ।

তাই আতংকিত না হয়ে, সচেতন হোউন। লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *